অশ্বগন্ধার প্রয়োজনীয়তা এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের নয়নমণি অশ্বগন্ধার প্রয়োজনীয়তা এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা আমাদের জীবনে অনেক। আজকের এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এই বিষয়ে জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
অশ্বগন্ধার প্রয়োজনীয়তা এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা
আমরা অনেকেই ঔষধি গুন হিসেবে অশ্বগন্ধার সম্পর্কে কম বেশি জানি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এর উপকারিতা কতটুকু সেটা জানতে আর দেরি না করে চলুন পুরো পোস্টটি পড়া শুরু করি।

ভূমিকা

অশ্বগন্ধা প্রায় ৩০০০ বছর ধরে ঔষধি ভেষজ হিসেবে সর্বত ব্যবহৃত হর আসছে। অনেক ক্ষেত্রে ধারণা আছে এটি প্রায় ৬০০ খ্রিস্টাব্দ বা তারও আগে থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। আজকের আলোচ্য পোস্টে অশ্বগন্ধা কি? অশ্বগন্ধার প্রয়োজনীয়তা এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা এবং মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

অশ্বগন্ধা কি?

অশ্বগন্ধার প্রয়োজনীয়তা এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা জানার আগে অশ্বগন্ধা কি এটি জানা আগে জরুরি। অশ্বগন্ধা হচ্ছে একটি আয়ুর্বেদী ভেষজ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Withania Somnifera। এখানে Somnifera এর অর্থ হচ্ছে ঘুমের উপর প্রভাব বিস্তারকারী এবং এটি একটি ল্যাটিন শব্দ। ভারতীয় চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাস অনুযায়ী এটি ‘‘অত্যাশ্চর্য ভেষজ’’ বা অ্যাডাপ্টোজেন (মানসিক চাপ মুক্তির এজেন্ট) হিসেবে আখ্যায়িত। 

আমাদের মানবদেহে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের অবদান অনেক। এটি মূলত ক্লান্তি, নানা ধরণের ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি মানসিক চাপের উপসর্গ বা দুশ্চিন্তার উপসর্গ কমাতে সর্বাপেক্ষা বেশি ব্যবহৃত হয়। অশ্বগন্ধায় উপস্থিত থাকা ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান একে এত গুণের অধিকারী করেছে। 

অশ্বগন্ধা নামটি এসেছে অশ্বগন্ধার মূল বা শিকড় থেকে কারন এর থেকে ঘোড়ার প্রস্রাব বা ঘামের গন্ধ পাওয়া যায়। এর সঠিক পরিমাণ গ্রহণ ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও কার্যকরী ফলাফল দেয় বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীন সময় থেকেই এই গাছের পাতা, ফল, বীজ ও শিকড় আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরি করার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে ক্রমান্বয়ে। 

এটি যেসব দেশে বেশি পাওয়া যায় সেগুলো হল পাকিস্তান, আফ্রিকা, স্পেন, ভারত, মধ্য প্রাচ্য এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে। অনেক গবেষকেরা মনে করেন ঘোড়ার মত শক্তি (শারীরিক শক্তি এবং যৌনক্ষমতা) অর্জন করতে অশ্বগন্ধা গ্রহণ করা উচিত। ৩৫ ধরণের ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান রয়েছে অশ্বগন্ধার নির্যাসে। 

অশ্বগন্ধার কিছু প্রাথমিক তথ্য নিম্নরুপ,
  • এর বৈজ্ঞানিক নাম উইথানিয়া সমনিফেরা(Withania Somnifera)।
  • এর পরিবার সোলানিসিয়াইওই (নাইটশেড ফ্যামিলি)
  • এর সংস্কৃত নাম অশ্বগন্ধা, কামারূপিনি, বরাহকর্নী (পাতা দেখতে শূকরের কানের মত)
  • এর সাধারণ নাম উইন্টার চেরি, ইন্ডিয়ান জিনসেন, পয়জন গুজবেরি
  • এটি মূলত মূল বা শিকড় এবং পাতা, তবে ফুল এবং বীজও ব্যবহার হয়।
  • অশ্বগন্ধা ভারতের অধিকাংশ ঊষ্ণ এলাকায় (মূলত মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান), নেপাল, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য, তবে বর্তমানে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও পৌঁছে গিয়েছে।
   
অশ্বগন্ধায় ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান ছাড়াও রয়েছে অ্যালকালয়েড, ট্যানিনস, স্যাপোনিন, স্ট্রেরয়ডাল ল্যাক্টনস যা ক্যান্সার, বার্ধক্যজনিত প্রভাব, স্ট্রেস, যৌনক্ষমতা সংক্রান্ত ও প্রদাহ জনিত সমস্যার বিরুদ্ধে ভাল কাজ করে। এতে উপস্থিত রয়েছে উইথাফেরিন এ, ডি, ই ।

মানবদেহে অশ্বগন্ধা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা

অশ্বগন্ধার ব্যবহার পদ্ধতি অনেক। এখানে ব্যবহার পদ্ধতি বলতে বোঝানো হয়েছে এটি আমাদের মানবদেহে কিভাবে কাজ করে সেই প্রক্রিয়া। এটি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনেক নিচে সেগুলো তুলে ধরা হল,
  • অশ্বগন্ধা গাছের রস শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে তাই শুক্রাণু সংখ্যা বাড়াতে অশ্বগন্ধার ব্যবহার অতুলনীয়।
  • এটি শরীরকে চাঙা রাখে। শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।
  • ঘুমের উন্নতি করতে হলে অশ্বগন্ধা গুঁড়ো চিনিসহ খেলে তা ভাল ঘুমের সহায়ক হবে।
  • সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় জানা গিয়েছে, কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান অশ্বগন্ধার মধ্যে রয়েছে। এখন এর ব্যবহার জানতে গবেষণার কাজ এখনও চলমান।
  • সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পেতে অশ্বগন্ধার মূলের গুঁড়ো খুবই কার্যকরী।
  • সন্ধিস্থলের ব্যথা কমাতে বা বিশেষত যারা রিউম্যাটয়েড আর্থারাইটিসে আক্রান্ত তাদের এ থেকে মুক্তি পেতে অশ্বগন্ধা সাহায্য করে। এটি ভারতীয় বৈজ্ঞানিকেরা একটি গবেষণায় দাবি করেছেন।
  • স্নায়ুবিক বিভিন্ন রোগের সমাধান হিসেবে অশ্বগন্ধার পাতা ও মূল কাজ করে।
  • দুধ ও ঘি এর সঙ্গে যদি অশ্বগন্ধার পাতা ফুটিয়ে খাওয়া যায় তাহলে শরীরে বল পাওয়া যায়।
  • জীবনীশক্তি এবং যৌনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে অশ্বগন্ধা সাহায্য করে।
  • চোখের ব্যথা দূর করতেও অশ্বগন্ধা বিশেষ উপকারী একটি ব্যবহার।
  • এটি একটি মূত্রবর্ধক (ডাইরেটিক) তাই শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল এবং লবণ বার করতে এর ভূমিকা অনেক।
  • অশ্বগন্ধা ক্রনিক ব্রংকাইটিসের ক্ষেত্রেও খুব কার্যকর।
  • অকাল বার্ধক্যের উপসর্গ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং শরীর পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
  • নানা রকম মানসিক ও শারীরিক সমস্যা যেমন, মাথা ঝিমঝিম করে ওঠা, সংজ্ঞাহীনতা, অবসাদ প্রভৃতি দূর করতে অশ্বগন্ধা সাহায্য করে। এছাড়াও এটি মনোযোগ বাড়ায় এবং সঞ্জীবনী শক্তি পুনরুদ্ধার করে।
  • হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। অম্বল-অজীর্ন, পেট ফাঁপা এবং পেটের ব্যথা নিরাময়ে অশ্বগন্ধার ব্যবহার অতুলনীয়।
  • অশ্বগন্ধা ব্যবহারে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
  • আর্থারাইটিসের কারণ আয়ুর্বেবেদিক চিকিৎসাশাস্ত্রে যাকে পিত্ত বলা হয়। অশ্বগন্ধা কার্যকর প্রদাহ-বিরোধী হওয়ায় এ আর্থারাইটিসের ব্যথা এবং ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
  • অশ্বগন্ধা আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের পেশির শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • আমাদের শরীরে সংক্রমণের বিরুদ্ধে ইমিউন সিস্টেমকে বৃদ্ধি করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 
  • প্রাচীনকাল হতে কাম সূত্রে অশ্বগন্ধা যৌন উত্তেজক ভেষজ হিসাবে  ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি একজন পুরুষের দেহে নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় এতে যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং তৃপ্তির বৃদ্ধি ঘটে।
  • অশ্বগন্ধা মানব শরীরে T4 মাত্রা বৃদ্ধি করতে এবং হাইপোথাইরয়েডিজম কমাতে ভূমিকা রাখে। তবে এ ব্যাপারে আরও পরীক্ষার প্রয়োজন আছে।
  • অশ্বগন্ধা শরীরে টেস্টোস্টেরন ও প্রোজেস্টেরনের পরিমাণ বাড়িয়ে যৌন মিলনের ইচ্ছে বাড়াতে ভূমিকা রাখে। এ পদ্ধতি প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে।
  • হৃদয় ( হার্ট) এর রক্ত চলাচলকে স্বাভাবিক করার মাধ্যমে হৃদয়ের পেশি শক্তিশালী করে এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে হার্ট ভাল থাকে।
  • আমাদের অনেক সময় কাজে অবসাদ চলে আসে। কাজে মন বসে না। অশ্বগন্ধা ধৈর্য্যশীলতা, শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ও সহনশীলতা প্রভৃতির উন্নতি করার মাধ্যমে শারীরিক পারফরম্যান্সকে আরও উন্নত করে।
  • বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে পার্কিনসন ও অ্যালজাইমারের দরুন স্নায়বিক ক্ষতির হার কমাতে অশ্বগন্ধা সাহায্য করে।  
  • আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মতে অশ্বগন্ধার পাতা ও মূলের নির্যাসে যে ফাইটোকেমিক্যালস থাকে তা টিউমার কোষকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। ক্যান্সারের সময় যে কেমোথেরাপির মধ্যে দিয়ে একটি মানুষকে যেতে হয় তাতে তার জীবনের মানের অনেক ক্ষতি সাধিত হয়। এ জীবন মানের উন্নতি ঘটাতে অশ্বগন্ধা কাজ করে।

ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে অশ্বগন্ধার ভূমিকা

বর্তমানে ডায়াবেটিকস পুরোপুরি নিরাময়ে কোন ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তবে ডায়াবেটিকস এর মাত্রা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। অশ্বগন্ধার প্রয়োজনীয়তা এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকার কথা বলতে গেলে বলতে হয় এটি রোগীর শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ইনসুলিন ক্ষরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে। 

এটি শুধুমাত্র ডায়াবেটিকস রোগীর জন্যই নয় একজন সুস্থ মানুষের দেহেও রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে একইরকম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অশ্বগন্ধার মূল ও পাতার নির্যাসে যে ফ্ল্যাভোনয়েডস থাকে তা ডায়াবেটিকস রোগীর শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও রোগীর শরীরে লিপিডের পরিমাণ ঠিক রাখতেও সাহায্য করে।

ত্বকের ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধার উপকারিতা

ত্বকের অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধে অশ্বগন্ধা ভূমিকা রাখে। আমাদের শরীরে বিভিন্ন বিপাকীয় কার্যকলাপের কারনে সৃষ্টি হয় ফ্রি র‌্যাডিক্যাল যা শরীরে বয়স নেমে আসার সবচেয়ে প্রধান কারণ। অশ্বগন্ধায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী বিদ্যমান যা এই ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল এবং তাজা রাখে। এছাড়াও ত্বক কুঁচকে যাওয়া, ডার্ক স্পট এবং অকাল বার্ধক্যের অন্যান্য লক্ষণ দূর করে। শুষ্ক এবং অমসৃণ ত্বকের জন্য দায়ী কেরাটোসিস বিরুদ্ধে অশ্বগন্ধা কাজ করে।   

সাপের বিষ প্রতিরোধে অশ্বগন্ধার ভূমিকা

যখন আমাদের শরীরে সাপ কামড় দেয় তখন বিষ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অশ্বগন্ধা গ্লাইকোপ্রোটিন (এক ধরনের প্রোটিন) এর মাধ্যমে বিষকে পাশের টিস্যুগুলিতে পৌঁছে দেয় ছড়াতে দেয় না। ভারতে সাপের কামড়ের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক হিসাবে অশ্বগন্ধার একটি প্রলেপ ব্যবহার হয়ে থাকে। 

অ্যাড্রিনাল ফেটিগ প্রতিরোধে অশ্বগন্ধার ভূমিকা

আমরা সদা ব্যস্ত এবং প্রবল গতির জীবনধারার প্রতি ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। চলে আসছে অবসাদ। এর কারন অ্যাড্রিনাল ফেটিগ। আমরা যখন প্রচণ্ড কাজের চাপে থাকি তখন আমাদের শরীরের অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড (বৃক্কের ওপরিভাগে অবস্থিত গ্ল্যান্ড) থেকে কর্টিসল নামে একটি হরমোন নিঃসৃত হয়।এটি একটি স্ট্রেস হরমোন যা আমাদের ক্লান্তি, অনিদ্রা, স্নায়ুদৌর্বল্য এবং হজমের সমস্যা দেখা যায়। অশ্বগন্ধা অ্যাড্রিনাল ফেটিগ এর বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।

হার্টের সুস্থতার জন্য অশ্বগন্ধার প্রয়োজনীয়তা

শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টোরেলের মাত্রা কমায় অশ্বগন্ধা। মানবদেহে হৃদযন্ত্রের সমস্যা যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ধমনীতে রক্ত জমাট বাধা এসবের জন্য ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টোরেল দায়ী। অশ্বগন্ধা উদ্ভিদে উপস্থিত অ্যাডপ্টোজেনিক উপাদানসমূহ চাপ কমাতে এবং পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে। 

  
এছাড়াও হৃদয়ের পেশিগুলির শক্তি এবং কার্ডিওরেসপিরেটরি ক্ষমতা(শারীরিক ব্যায়ামের সময় হার্ট এবং ফুসফুসে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ) বাড়াতে সাহায্য করে অশ্বগন্ধা। ধমনীতে রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধে অশ্বগন্ধার অন্টিকোঅ্যাগুলেন্ট গুণ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিতে অশ্বগন্ধার ভূমিকা

মানসিক সমস্যার কারনে পুরুষদের লিঙ্গ দৃঢ় হয় না একে বলে লিঙ্গ উচ্ছৃত না হওয়া। অশ্বগন্ধা সেবনে শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি যৌনক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।

অশ্বগন্ধা ব্যবহারের কিছু সাধারণ নিয়ম

অ্যাজমা বা হাঁপানি, লিউকোডার্মা, ব্রঙ্কাইটিস,ফাইব্রোমায়লজিয়া,নিদ্রাহীনতা, টিউমার, যক্ষা,অ্যাড্রিনাল ফেটিগ জাতীয় রোগের ক্ষেত্রে অনেক আগের থেকেই অশ্বগন্ধা ব্যবহার হয়ে আসছে। এতক্ষণ জানলাম অশ্বগন্ধার প্রয়োজনীয়তা এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা কতটুকু কিন্তু এটি কিভাবে ব্যবহার করব টা নিচে তুলে ধরা হল,
  • আমরা অশ্বগন্ধা চায়ের গুঁড়োর মত পাউডার আকারে বেশি পেয়ে থাকি। আমরা এর সাথে দুধ, ঘি বা মধু মিশিয়ে খেতে পারি।
  • আমরা বাজারে এটি সিরাপ, শরীরের উপরিভাগে লাগানো ক্রিম, এবং পেস্ট হিসাবেও পেয়ে থাকি।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসা অনুযায়ী কিছু ডোজ আছে সেভাবে আপনাকে সেবন করতে হবে যেমন,
  • এক কাপ চা, দুধ বা মধুর সঙ্গে ১-২ চামচ অশ্বগন্ধার পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • অনেক ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধার মূল, দুধ, মধু এবং বাদামের মিশ্রণ ব্যবহার হয়ে থাকে ঘুমের টনিক হিসাবে যা মানুষিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা কমায়।
  • ক্ষত বা প্রদাহের চিকিৎসায় অশ্বগন্ধা পাতার একটি পেস্ট বা মলমের প্রলেপ ব্যবহার হয়।
  • যৌনস্বাস্থ্যের উপকারীর জন্য এটি মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • যদি দ্রুত ফল পেতে চান তাহলে অশ্বগন্ধার নির্যাসের সঙ্গে পরিমাণ মত অ্যালকোহল মিশিয়ে টিংচার প্রস্তুত করে নিতে হবে। তাহলে এটি রক্তে দ্রুত মিশে যাবে এবং ফল দিবে। তবে এর ডোজ নির্ভর করবে টিংচারের শক্তি এবং রোগীর বয়স এবং লিঙ্গের ওপর। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভেষজবিদের পরামর্শ নিন।

অশ্বগন্ধার ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

অশ্বগন্ধার ব্যবহারে উপকারিতা থাকলেও এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে। তাই এটি সেবনের আগে এর ডোজের নিয়ম একজন ভেষজ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে। অশ্বগন্ধার প্রয়োজনীয়তা এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকার পাশাপাশি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো নিচে তুলে ধরা হল,
  • অশ্বগন্ধার উষ্ণ প্রভাব আছে যার দরুন যাঁদের শরীরে পিত্তের প্রভাব থাকে তাদের এটির দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার ভাল হয় না কারন তাদের শরীর স্বভাবতই উষ্ণ থাকে। এর ব্যতিক্রম হলে গ্যাস্ট্রিক আলসার, ডায়রিয়া (আন্ত্রিক), এবং বমিভাব দেখা যেতে পারে।
  • যদি আপনার বর্তমানে কোন ওষুধ চলমান থাকে তাহলে এটি সেবনের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে যেমন, যিনি রক্তে শর্করা কমানোর ওষুধ নিয়ে তিনি যদি এই অবস্থায় অশ্বগন্ধা সেবন করেন তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি নেমে যেতে পারে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের এটির সেবনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
  • সাম্প্রতিককালে আপনার শরীরে যদি অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে তাহলে এটি ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে। অশ্বগন্ধা রক্ত পাতলা করে তাই আপনি যদি রক্ত পাতলা করার ওষুধ নিয়ে থাকেন তাহলে এটি ব্যবহার থেকে আপনাকে দূরে থাকতে হবে।
  • যেহেতু এটি ঘুমের জন্য ভাল তাই আপনার ঘুমের ওষুধ চললে এটি সেবন করা উচিত নয় নইলে অতিরিক্ত ঘুম হবে যা শরীরের জন্য খারাপ।

লেখকের মন্তব্য

আজকের এই পোস্টে অশ্বগন্ধার প্রয়োজনীয়তা এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। আশা করি পাঠকদের জন্য এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকারে আসবে। আপনার এই পোস্টটি পরে ভাল লেগে থাকলে আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন এবং নিত্য নতুন আরও তথ্য পেতে পেজটি ফলো করে সাথে থাকুন। আরও জানতে কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url