অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ব্যবহারের নিয়ম, এর ক্ষতিকর প্রভাব সমূহ এবং সতর্কতা

অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ব্যবহারের নিয়ম, এর ক্ষতিকর প্রভাব সমূহ এবং সতর্কতা আমাদের জানা অতি জরুরি। এ বিষয়ে আলোচ্য অংশে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ব্যবহারের নিয়ম, এর ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ এবং সতর্কতা
আমাদের মধ্যে অনেকেই ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ব্যবহারের নির্দেশ পেয়েছি কিন্তু এই অ্যাজিথ্রোমাইসিন সেবনের আগে অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ব্যবহারের নিয়ম, এর ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ এবং সতর্কতা আগে জেনে নেই আলোচ্য পোস্টে।

ভূমিকা

বিভিন্ন কারনে আমরা অনেকে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে পড়ছি। এর পেছনে মুল কারন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অস্বাস্থ্যকর খাবার, জীবাণুমুক্ত না থাকা প্রভৃতি। এর ফলে আমরা ফুসফুস, ত্বক, কান ও যৌনঘটিত রোগের সংক্রমণ ছাড়াও অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের শিকার হচ্ছি। 

এ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আমাদের দরকার পরছে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন যেমন অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin)। কিন্তু এটি সেবনে আমরা অনেকেই সতর্কতা অবলম্বন করছিনা। তাই আজকে অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ব্যবহারের নিয়ম, এর ক্ষতিকর প্রভাব সমূহ এবং সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) কি?

অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ব্যবহারের নিয়ম, এর ক্ষতিকর প্রভাব সমূহ এবং সতর্কতা জানার আগে আমাদের জানতে হবে অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) কি এর আবিষ্কার। অ্যাজিথ্রোমাইসিন মূলত একটি অ্যান্টিবায়োটিক যা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি সাধারণ ঠান্ডা, ফ্লু বা ভাইরাস জনিত সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে বলা হয়না। 

এটি অ্যান্টিবায়োটিকটি ম্যাক্রোলাইড গোত্রের একটি ওষুধ। এটি ফুসফুস, ত্বক, কান ও যৌনঘটিত রোগের সংক্রমণ ছাড়াও অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি কখনও কখনও ম্যালেরিয়া নিরাময়ের জন্যও ব্যবহৃত হয়ে থাকে অন্যান্য ওষুধের সাথে সাথে। একটিকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক শ্রেণীর থেরাপিউটিক ঔষধ। 

এটি কখনই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা উচিত নয়। এটি ১৯৮০ সালে ক্রোয়েশিয়ার জাগরেবের প্লিভা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির বিজ্ঞানীদের একটি গ্রুপ আবিষ্কার করেছিল। এটি পেটেন্ট করা হয়েছিল ১৯৮১ সালে প্লিভা দ্বারা। 

এই ওষুধের ডোজ কতটুকু গ্রহণ করতে হবে তা নির্ভর করবে রোগীর বয়স, ওজন,অন্যান্য় শারীরিক অবস্থা এবং যে অবস্থার জন্য চিকিৎসা করা হচ্ছে সেগুলোর উপর। কোভিড ১৯ মহামারী চলাকালীন সময়ে অনেক ডাক্তার কোভিড ১৯ এর লক্ষণগুলি প্রশমিত করতে অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহার করেছিলেন। 

এ ওষুধের প্রভাব এবং এর ব্যবহার ব ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। এ ওষুধ সেবন দিনে একবারই গ্রহণ করতে হয় এবং এটি মুখের মাধ্যমে  বা শিরার মধ্যে দিয়ে শরীরে প্রবেশ করান হয়। অ্যাজিথ্রোমাইসিন দ্বারা চিকিৎসা স্বল্পমেয়াদী হতে হবে এবং অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে নাতো এটি রোগীর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। 

অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা এবং নিয়ম

কখন অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা হয় তা নিম্নরূপ,
  • চামড়া এবং নরম টিস্যুর সংক্রমণ হলে।
  • নাকের সংক্রমণ যেমন সাইনোসাইটিস হলে।
  • কানে সংক্রমণ (ওটিটিস মিডিয়া) হলে।
  • গলার সংক্রমণ এর ক্ষেত্রে যেমন ফ্যারিঞ্জাইটিস এবং টনসিলাইটিস হলে।
  • ত্বকের সংক্রমণ যেমন লাইম রোগ হলে।
  • অন্ত্র এবং পাকস্থলীর প্রদাহ হলে।
  • যৌনবাহিত রোগের ক্ষেত্রে যেমন ইউরেথ্রাইটিস, সার্ভিসাইটিস এবং ক্ল্যামাইডিয়া।
  • তীব্র ডায়রিয়া হলে।
অবশ্যই এ ওষুধ সেবনে ডাক্তারের পরামর্শ অতি জরুরী। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত এ ওষুধ সেবন করবেন না।

অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ব্যবহারের নিয়ম

প্রথমত আবারও বলতে হয় এ ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে। আপনি একজন ভাল ডাক্তারের কাছেই এর ব্যবহারের নিয়ম পেয়ে যাবেন তারপরও এর ব্যবহারের কিছু সাধারণ নিয়ম নিচে তুলে ধরা হল,
  • অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) সেবনের নির্দিষ্ট সময়ের কোর্স থাকে। ভাল বোধ শুরু করার পরেও সম্পূর্ণ কোর্স কমপ্লিট করতে হবে। কোর্স কমপ্লিট না করলে সংক্রমণ সম্পূর্ণরূপে দূর হবে না।
  • আপনাকে যদি ক্যাপসুল দেওয়া হয় তাহলে আপনি সেটি অবশ্যই খাওয়ার কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে বা দুই ঘণ্টা পরে প্রচুর জলের সাথে খাবেন।
  • আপনাকে যদি ট্যাবলেট দেওয়া হয় তাহলে একইভাবে প্রচুর জলের সাথে খাবেন। পেটে যদি অস্বস্তি অনুভব করেন তবে খাবারের পর সেগুলি খান।
  • অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) মৌখিক সাসপেনশন অবস্থাও সেবন করান হয়। এক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করার আগে এটি ভালভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে।

অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) এর ক্ষতিকর প্রভাব সমুহ

অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) সেবন যেমন জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে তেমনি এর অনিয়মিত সেবন মাত্রা জীবননাশের কারণও হয়ে দাড়ায়। এর ক্ষতিকর প্রভাবসমুহ নিচে তুলে ধরা হল,
  • বমি বমি ভাব,বমি,পেটে ব্যথা,ডায়রিয়া বা আলগা মল হতে পারে।
  • পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন, চোখের সমস্যা, কথা বলতে বা গিলতে অসুবিধা,অস্বাভাবিক ক্লান্তি,পেটে ব্যথা,শ্রবণ ক্ষমতার হ্রাস, পেশী দুর্বলতা,ত্বক বা চোখের হলুদভাব প্রভৃতি।
  • অনেক সময় এ ওষুধের কারনে C.difficile ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্ট একটি গুরুতর অন্ত্রের অবস্থা হতে পারে।
  • কিছু ক্ষেত্রে এ ওষুধের অনিয়মিত সেবনের কারনে ডায়রিয়া অনুভব হবে যা সহজে বন্ধ হবেনা,পেটে ব্যথা হবে,মলে রক্ত ​​বা শ্লেষ্মা হতে পারে। এই উপসর্গগুলো অনুভব করলে অতি দ্রুত ডাক্তার দেখান।
  • এ ওষুধের অনিয়মিত সেবনের ফলে তাজা খামির সংক্রমণ হতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে যে মুখে কোন সাদা ছোপ দেখা যায় কিনা বা যোনি স্রাব বা অন্য কোন তাজা উপসর্গ।
  • আরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন, দ্রুত বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন বা চরম তন্দ্রা বা অজ্ঞানতা অনুভব।
  • গুরুতর অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এছাড়াও ক্রমাগত জ্বর, চুলকানি, মাথা ঘোরা,ফুসকুড়ি, নতুন বা খারাপ হওয়া লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া,শ্বাস নিতে সমস্যা প্রভৃতি হতে পারে।
  • ডাক্তার লিখিত কোর্স শেষ না করেই যদি এ ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেন তাহলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া ফিরে আসতে পারে।

অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ব্যবহারে সতর্কতা

আজকের আলোচনায় আমরা জানতে পারছি অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ব্যবহারের নিয়ম, এর ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ এবং সতর্কতা। আমরা ব্যবহারের নিয়ম, এর ক্ষতিকর প্রভাব সমূহ সম্পর্কে জানলাম। এখন এর ব্যাবহারে সতর্কতাগুলো নিচে তুলে ধরা হল,
  • প্রথমত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এ ওষুধ সেবন করা উচিত। পুরো কোর্স কমপ্লিট করা উচিত।
  • আপনার অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে এ ওষুধ কিনার আগে ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টকে বলুন। অ্যান্টিবায়োটিক যেমন এরিথ্রোমাইসিন, ক্ল্যারিথ্রোমাইসিন এবং টেলিথ্রোমাইসিন।
  • আপনার লিভারের রোগ, কিডনি রোগ, বা একটি নির্দিষ্ট ধরণের পেশী রোগ থাকলে সেটাও জানান।
  • যদি দেখেন যে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হচ্ছে যা QT দীর্ঘায়িত হওয়ার ফলে হয় দ্রুত চিকিৎসা নেন।
  • টাইফয়েড এবং অন্যান্য জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া ভ্যাকসিনগুলি নেওয়ার আগে খেয়াল করুন যে আপনি অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) সেবন করেছেন কিনা। করে থাকলে ডাক্তারকে জানান।
  • বয়স্ক, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই ওষুধের অন্যান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আরও গুরুতর হতে পারে। তাই বয়স্ক, প্রাপ্তবয়স্কদের এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
  • যেসব মহিলারা গর্ভাবস্থায় আছেন তারা শুধুমাত্র খুব প্রয়োজন হলেই এই ওষুধটি সেবন করা উচিত। তাছাড়া শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) স্টোরেজ, নিষ্পত্তি এবং এটি ধারণকারী ওষুধসমুহ

অ্যাজিথ্রোমাইসিন যেহেতু ট্যাবলেট, সাসপেনশন এবং এক্সটেন্ডেড রিলিজ সাসপেনশন তাই ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা উচিত এবং চরম তাপ ও ​​আর্দ্রতার উৎস স্থান থেকে দূরে রাখতে হবে। অবশ্যই শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পরিবেশে না রাখায় ভাল। অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) যখন প্রয়োজন হবে না বা মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সাসপেনশন ফেলে দেওয়া উচিত। 

অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) থাকে এমন কিছু ওষুধের নাম নিচে দেওয়া হল,
  • আজিমেড ২৫০ এম জি সাসপেনশন (Azimed 250 MG Suspension)- Zydus Cadila
  • আজিফাস্ট‌ ২৫০ এম জি ট্যাবলেট (Azifast 250 MG Tablet)- Ipca Laboratories Pvt Ltd.
  • আরজেক্স ৫০০ এম জি ক্যাপসুল (Argex 500 MG Capsule)- Dr. Johns Laboratories Pvt Ltd
  • অ্যাভিন্ড‌ো ২ % জেল (Avindo 2 % Gel)- Adcock Ingram Healthcare Pvt Ltd
  • আজিভেন্ট ২০০ এম জি সাসপেনশন (Azivent 200 MG Suspension)- Aristo Pharmaceuticals Pvt.Ltd
  • আজিব্যাক্ট ১০০ এম জি সিরাপ (Azibact 100 MG Syrup)- Ipca Laboratories Pvt Ltd
  • আজিথ্রাল এক্স এল ২০০ এম জি লিকুইড (Azithral Xl 200 MG Liquid)- Alembic Ltd
  • জিথ্রোসিন ২০০ এম জি লিকুইড (Zithrocin 200 MG Liquid)- Biochem Pharmaceutical Inds
  • জ্যাথরিন ২০০ এম জি রেডিমিক্স (Zathrin 200 MG Redimix)- Fdc Ltd

অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) যেভাবে কাজ করে

অ্যাজিথ্রোমাইসিন হচ্ছে একটি ব্যাকটেরিয়োস্ট্যাটিক ওষুধ। এটি প্রোটিন সংশ্লেষণকে বাধা দেয় সংবেদনশীল মাইক্রো-অর্গানিজমের ৫০S রিবোসোমাল সাব-ইউনিটের সাথে নিজেকে বাঁধন করার মাধ্যমে। এটি ট্রান্সপেপ্টিডেশন এবং স্থানান্তরের সাথে লঙ্ঘন করার মাধ্যদ্ধ প্রোটিন সংশ্লেষণ এবং কোষ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।

লেখকের মন্তব্য

আজকের এই পোস্টে অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) ব্যবহারের নিয়ম, এর ক্ষতিকর প্রভাব সমূহ এবং সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পাঠকদের জন্য এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকারে আসবে। আপনার এই পোস্টটি পরে ভাল লেগে থাকলে আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন এবং নিত্য নতুন আরও তথ্য পেতে পেজটি ফলো করে সাথে থাকুন। আরও জানতে কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url