শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান এবং সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার বিবরণ

প্রিয় পাঠক আপনারা কি শীতকালে সিলেট ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন ? শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান এবং সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার বিবরণ সম্পর্কে এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে সিলেট ভ্রমণের আগে এর সম্পর্কে জেনে আসি। 

শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান এবং সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার বিবরণ

আমরা অনেকেই সিলেট যাওয়ার পরিকল্পনা করছি কিন্তু কোন জায়গাগুলো ভ্রমণের জন্য ভালো হবেসেগুলো হয়তো অনেকেই জানিনা। তাই শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান এবং সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার বিবরণ সম্পর্কে এই পোস্টে দেওয়া আছে। চলুন সে প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা জেনে নেই। 

ভূমিকা  

বর্তমান সময়ে অল্প খরচে ভ্রমণের জন্য সিলেট একটি আদর্শ জায়গা। আপনি অল্প খরচে শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান এবং সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার বিবরণ জেনে এবং দেখে আসতে পারবেন। এই দশটি দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আছে চা বাগান, আলী আমজাদের ঘড়ি, বিছানাকান্দি, উৎমাছড়া, জাফলং, ডিবির হাওর, পান্তুমাই, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, রাতারগুল জলাবন এবং লালাখাল। এইসব স্থানগুলো সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে যা আপনাদের ভ্রমণের জন্য সহায়ক হবে।

সিলেটের বিবরণ

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি শহর সিলেট। সিলেট বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এই শহর জনপদ ও নিজস্ব সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিকভাবে সৌন্দর্যমন্ডিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও এই শহরের আছে একটি প্রসিদ্ধ ইতিহাস। এখানে বসবাসকারী বিভিন্ন আদিবাসীদের ভাষা ভিন্ন ভিন্ন এবং সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন। সিলেটকে বলা হয় একটি পর্যটন নগরী, যেখানে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান।

সিলেটে ছোট ছোট অনেক জলপ্রপাত ও পথ অনেক আছে। তাদের বেশিরভাগই সুন্দর এবং ট্রেকিং করা সহজ। আপনি যদি হাইকিং এবং ট্রেকিং পছন্দ করেন তবে এই বিভাগে প্রচুর ট্রেইল এবং পাহাড় রয়েছে। সিলেটের পার্বত্য অঞ্চলে কয়েকটি উপজাতি রয়েছে। আপনি তাদের জায়গায় যেতে পারেন এবং তাদের অনন্য সংস্কৃতি এবং উৎসব সম্পর্কে আরও জানতে তাদের সাথে যোগ দিতে পারেন। শীতকালে সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার জন্য উপযুক্ত সময়।

সিলেটের প্রধান পর্যটন আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে চা বাগান, রাতারগুল জলাবন, জাফলং, হাকালুকি, ভোলাগঞ্জ, বিছানাকান্দি, তামাবিল পাহাড় এবং বিভিন্ন ঝর্ণা। এই সব মিলিয়ে সিলেট নানা বৈচিত্রের একটি সম্ভার। সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলো প্রকৃতির এক অপরূপ দান।

আরও পড়ুনঃ



সিলেটি ভাষা

সিলেটি ভাষা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল এবং ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকা ও হোজাই জেলায় প্রচলিত একটি ভাষা। সিলেটি ভাষা বা সিলোটি ভাষা মূলত ইন্দো-আর্য ভাষা পরিবারের অংশ। প্রায় ১.১৮ কোটি মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। বাংলা ভাষার মূল রীতির সাথে সিলেটি ভাষার যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায় কারণ এটি পূর্বাঞ্চলীয় ভাষা এবং বাংলা ভাষার প্রমিত রীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

অনেক ভাষাবিদ এটিকে বাংলার উপভাষা এবং স্বাধীন ভাষা বলে গণ্য করেন। ২০২০ সালে কানাডাভিত্তিক ওয়েবসাইট ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট-এর প্রকাশিত বিশ্বের ১০০টি কথ্য ভাষার তালিকায় সিলেটি ভাষা পৃথিবীর ৯৭তম বৃহৎ ভাষা হিসেবে স্থান পায়। সিলেটের দর্শনীয় স্থান এবং এর ঐতিহাসিক ও ভাষাগত গুরুত্ব মিলিয়ে এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। 

শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান এবং সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার বিবরণ

চা বাগান 

শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ হলো চা বাগান। সিলেটকে মূলত চিনি চা বাগানের জন্য। মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জ সদর জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অজস্র চা বাগান রয়েছে, যা প্রায় কয়েক লাখ একর জায়গা নিয়ে গঠিত। আমাদের দেশে উৎপন্ন ৯৫ ভাগ চা এইসব এলাকায় উৎপাদিত হয়। দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সিলেটের চা বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।

চা উৎপাদন সাধারণত উঁচু জমিতে হয়, আর সিলেটের উঁচু টিলা জমির জন্য এটি চা উৎপাদনের জন্য আদর্শ। সিলেটের চা বাগানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি শ্রীমঙ্গল, সাতগাঁও, মাধবপুর, রশীদপুর, তেলিয়াপাড়া ও জুড়ি এলাকায়। এসব এলাকায় টিলা জমি থাকার কারণে চা উৎপাদনের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। চা বাগানের ভিতর দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়। সিলেটের দর্শনীয় স্থান হিসেবে চা বাগানগুলি পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

সিলেট শহরের ভেতরেও আরও কয়েকটি চা বাগান রয়েছে, যেমন লাক্কাতুরা, মালিনীছড়া, খাদিম, এবং আলীবাহার। পর্যটক ও ভ্রমণকারীরা মূলত চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করেন এবং চা উৎপাদনের পদ্ধতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সিলেটের চা বাগানগুলি দেখতে বিদেশি পর্যটকদেরও আগমন ঘটে, যার ফলে এই এলাকাগুলোকে কেন্দ্র করে অনেক উন্নত মানের রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। সিলেটের দর্শনীয় স্থান হিসেবে চা বাগানগুলি সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

আলী আমজদের ঘড়ি

আলী আমজদের ঘড়ি মূলত একটি বিরাট আকারের ঘড়ি যা একটি ঘরের চূড়ায় স্থাপিত। এটি বাংলাদেশের সিলেট শহরের উনবিংশ শতকের একটি স্থাপনা এবং সিলেটের সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে সিলেটের সদর উপজেলায় অবস্থিত। আড়াই ফুটের ডায়ামিটার এবং দুই ফুট লম্বা কাঁটা বিশিষ্ট এই ঘড়িটি সিলেটের দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত।

১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে, যখন ঘড়ির এত প্রচলন ছিল না, তখন সিলেট মহানগরের প্রবেশদ্বার যা তখন উত্তর সুরমা নামে পরিচিত ছিল, কিং ব্রিজের ডান পাশে সুরমা নদীর তীরে এই ঘড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল। শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান এবং সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গারবিবরণের মধ্যে আলী আমজদের ঘড়ি অন্যতম আকর্ষণ। এটি সিলেটের কুলাউড়ার জমিদার আলী আহমদ খান নির্মাণ করেন এবং তার ছেলে আলী আমজাদের নামকরণে এটি পরিচিতি লাভ করে।

এই ঘড়িটি লোহার খুঁটির উপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর গোলার আঘাতে ঘড়িটি নষ্ট হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর সিলেট পৌরসভা এটি মেরামত করে সচল করে, কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে ঘড়ির কাঁটা আবার বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর, ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে আলী আমজদের ঘড়ি পুনরায় মেরামত করা হয় এবং ঢাকার একটি কোম্পানির কারিগররা রিমোট কন্ট্রোলের ব্যবস্থা করেন, যা পৌর চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে নিয়ন্ত্রণে থাকতো। শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আলী আমজদের ঘড়ি বিশেষভাবে জনপ্রিয়, কিন্তু ঘড়িটি কিছুদিনের মধ্যেই আবার বন্ধ হয়ে যায়।

পরে, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সিজন কোম্পানি এটি পুনরায় চালু করে, কিন্তু তা আবার নষ্ট হয়। এরপর, ২০১১ খ্রিস্টাব্দে সিলেট সিটি কর্পোরেশন ঘড়িটি পুনরায় মেরামত করে এবং এখন এটি দৈনিক ২৪ ঘন্টা সচল অবস্থায় রয়েছে। সিলেটের দর্শনীয় স্থান হিসেবে আলী আমজদের ঘড়ি পর্যটকদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ।

বিছানাকান্দি

সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের মধ্যে অবস্থিত বিছানাকান্দি, যা বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি জায়গা হিসেবে পরিচিত। সিলেটের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে বিছানাকান্দি বিশেষভাবে জনপ্রিয়। মূলত এটি একটি পাথর কোয়েরি, যেখানে নদী থেকে পাথর সংগ্রহ করা হয়। খাসিয়া পর্বতের বিভিন্ন স্তর এখানে এসে এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে, যা প্রকৃতির এক অসাধারণ রূপ।

শীতকালে বিছানাকান্দির সৌন্দর্য আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এখানে একটি হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে, যার পানির উৎস খাসিয়া পর্বত থেকে নেমে আসা একটি ঝর্ণা। শীতকালে এই ঝর্ণার পানি আরও স্বচ্ছ এবং শীতল হয়, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। সিলেটের দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিছানাকান্দি তার প্রাকৃতিক শিলা পাথরের জন্যও বিখ্যাত। এই পাথরগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং পাহাড়ি ঢলের সাথে পানির মাধ্যমে নেমে আসে, যা দেখলে প্রকৃতির সান্নিধ্য অনুভব করা যায়।

বিছানাকান্দির এই অপূর্ব দৃশ্য শীতকালে সিলেট ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। সিলেটের দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিছানাকান্দি তার অনন্য প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

উৎমাছড়া

বিছানাকান্দির একটি প্রতিরূপ হিসেবে পরিচিত উৎমাছড়া, যার চারপাশ ঘেরা সারি সারি পাহাড়। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা শীতল পরিষ্কার জলরাশি, গারো সবুজের প্রলেপে আবৃত গাছপালা এবং ঝোপঝাড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই স্থানটি প্রকৃতির এক অপার লীলাভূমি। সিলেটের দর্শনীয় স্থান হিসেবে এটি সম্প্রতি বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। উৎমাছড়ার অবস্থান সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রাণিখাই ইউনিয়নে। মেঘালয়ের পাহাড়ের ঝর্ণার পানি এই নদীর প্রবাহের মূল উৎস।

শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উৎমাছড়াকে সিলেটের নতুন বিছানাকান্দি বলে আখ্যায়িত করা হয়। মেঘালয় থেকে নেমে আসা সিলেটের সীমান্তবর্তী ধোলাই নদীর উৎসমুখেই রয়েছে সাদা পাথরের রাজ্য। উৎমাছড়ার ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে রয়েছে সারিসারি পাহাড়, পাহাড়ের বুক চিরে গারো সবুজের আস্তরণ, যা দেখতে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।

শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান এবং সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার বিবরণের মধ্যে উৎমাছড়া তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাদা পাথরের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। বর্ষাকালে এর সৌন্দর্য আরও বেশি উপভোগ্য হলেও অন্যান্য মৌসুমে একে মনে হয় মরুভূমির বুকে গজিয়ে ওঠা সবুজ উদ্যান। এখানে যেদিকে যাবেন, খালি পাথর আর পাথর দেখতে পাবেন, যেগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি মোটা ঘাসে ঢাকা, আবার কোনো কোনোটি ধবধবে সাদা। সিলেটের দর্শনীয় স্থান হিসেবে উৎমাছড়া তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

জাফলং

জাফলং, সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি পর্যটন স্থল। সিলেটের দর্শনীয় স্থান হিসেবে এটি পরিচিত এবং ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। জাফলং পাহাড় এবং নদীর অপূর্ব সম্মেলন হিসেবে বাংলাদেশে অন্যতম পর্যটন এলাকা। এটি সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোরম।

জাফলং শুধুমাত্র পর্যটনের জন্যই নয়, পাথরের জন্যও বিশেষভাবে পরিচিত। সিলেটের সীমান্তবর্তী এই এলাকা, যা ভারতের ডাওকি অঞ্চলের সন্নিকটে অবস্থিত, প্রকৃতির অনন্য সান্নিধ্য এবং পাথরের জন্যও খ্যাতি অর্জন করেছে। ডাউকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে ডাউকি নদী জাফলং দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জাফলং মূলত পিয়াইন নদীর অববাহিকায় অবস্থিত, যেখানে প্রচুর পরিমাণে পাথর পাওয়া যায়। সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হিসেবে জাফলংয়ের খ্যাতি বর্ষাকাল এবং শীতকালে বিভিন্ন রূপে ফুটে ওঠে।

এইসব পাথরের প্রধান উৎস ভারতীয় সীমান্তবর্তী শিলং মালভূমির পাহাড়। বর্ষাকালে শিলং মালভূমির পাহাড় গুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়, তখন ওই পাহাড় থেকে ডাউকি নদীর প্রবল স্রোতে অনেক বড় বড় গণ্ডসিলা এসে জাফলং নদীতে জমা হয়। এই কারণে, জাফলং নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাথর পাওয়া যায় এবং এর ওপর ভিত্তি করে এলাকার মানুষের একটি বৃহৎ অংশের জীবিকা গড়ে উঠেছে।

জাফলং এর দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ হলো ঝর্ণা। জাফলং এর বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে দাঁড়ালে ওইপাশে ভারতের সীমান্তে থাকা উঁচু উঁচু পাহাড় শ্রেণী দেখা যায়, যা অতি সুন্দর ও মনোরম। এছাড়াও, ডাউকি ব্রিজ থেকে ভারতের ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত ব্রিজ দেখা যায়, যা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। এই সব কারণে, জাফলং সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হিসেবে পরিগণিত।

শীতকালে, জাফলং এর সৌন্দর্য ভিন্নভাবে ফুটে ওঠে। শীতকালে ঝর্ণার পানি কমে যায়, কিন্তু নদীর পানি এতটাই স্বচ্ছ যে উপর থেকে নিচের পাথর পরিষ্কার দেখা যায়। এছাড়াও, পাহাড়ের উপরে মেঘের দৃশ্য এবং ঝর্ণার জলপ্রপাত পর্যটকদের মনোমুগ্ধ করে। সিলেটের দর্শনীয় স্থান হিসেবে জাফলং-এর সৌন্দর্য বর্ষাকালে বৃষ্টি ও নদীর স্রোতে আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে। সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হিসেবে জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি চমৎকার উদাহরণ।

ডিবির হাওর

ডিবির হাওর, যেটি জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত এবং অনেকের কাছে "শাপলার লেক" বা "লাল শাপলার বিল" নামেও পরিচিত, সিলেটের অন্যতম সুন্দর জায়গা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এই হাওরের আশেপাশে আরও তিনটি বিল রয়েছে - ইয়াম বিল, হরফকাটা বিল এবং কেন্দ্রীবিল। শীতকালে, ডিবির হাওর হয়ে ওঠে সিলেটের দর্শনীয় স্থানের একটি অনন্য আকর্ষণ, যেখানে লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের।

ডিবির হাওরে প্রচুর লাল শাপলা জন্মানোর একটি ইতিহাস আছে। প্রায় ৩০ বছর আগে, সীমান্তের ওপারে খাসিয়া সম্প্রদায় তাদের পূজা-অর্চনার জন্য এই বিলে লাল শাপলার চারা রোপণ করে। ধীরে ধীরে লাল শাপলার বিস্তার ঘটে কেন্দ্রীবিল, হরফকাটা বিল, ইয়ামবিলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে, যার ফলে বর্তমানে এই চারটি বিল মিলে প্রায় ৭০০ একর জায়গা জুড়ে লাল শাপলার বিস্তার ঘটেছে। এই অনন্য লাল শাপলার বিল শীতকালে সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে ওঠে এবং পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায়।

এই হাওরে একটি পুরাতন মন্দিরও আছে, যা জৈন্তা রাজ্যের রাজা রামসিংহের স্মৃতিতে নির্মিত। জনশ্রুতি অনুযায়ী, রাজা রামসিংহকে এই হাওরেই ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। এছাড়াও, প্রতি বছর শীতকালে এখানে পানকৌড়ি, পাতিসরালি, জল ময়ূরী, সাদাবক ও বালিহাঁসসহ অসংখ্য পাখি আসে, যা এই স্থানকে সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর একটি বিশেষ পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে তুলে ধরে। ডিবির হাওরের এই মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পাখিদের উপস্থিতি একে সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে একটি করে তুলেছে।

পাংতুমাই

পাংতুমাই, একটি অনিন্দ্য সুন্দর গ্রাম, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে অবস্থিত। সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার মধ্যে একটি হিসেবে পাংতুমাই খ্যাতি অর্জন করেছে, যেখানে "ফাটাছড়ির ঝর্ণা" বা "বড়হিল ঝরনা" এর প্রধান আকর্ষণ। ঝরনাটি ভারতের সীমান্তের মধ্যে থাকলেও পিয়াইন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে শীতকালে এর সৌন্দর্য অপরূপভাবে উপভোগ করা যায়। পাংতুমাই গ্রামটি জাফলং থেকে প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের ঠিক নিচে সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত। এই গ্রাম থেকে দেখা যায় মেঘালয়ের সারি সারি পাহাড়ী ঝর্ণার জলধারা, যা সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর অন্যতম।

শীতকালে পাংতুমাই গ্রামের প্রকৃতির রূপ আরও মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। দিগন্ত বিস্তৃত চারণভূমি, পাহাড় ঘেঁষে চলে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তা, পাহাড়ের গুহা থেকে নেমে আসা ঝর্ণার জলরাশি এবং স্থানীয় বাঁশ বাগান একে সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার একটি হিসেবে তুলে ধরে। প্রতাপ্পুর গ্রামের মেঠো পথে হাঁটু জলের নদী পার হয়ে আপনি পাবেন গ্রামীণ জীবনের স্পর্শ, যা সিলেটের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে পাংতুমাইকে একটি অনন্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত করে।

শীতকালে, পাংতুমাই গ্রাম এবং এর আশেপাশের এলাকা আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, যখন ঝর্ণার জলে শীতের হিমেল স্পর্শ ও মেঘালয়ের পাহাড়ের সৌন্দর্য একে আরও মনোরম করে তোলে। সিলেটের দর্শনীয় স্থান হিসেবে পাংতুমাই গ্রাম পর্যটকদের জন্য শীতকালে অন্যতম গন্তব্য হয়ে ওঠে, যা প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার মধ্যে অন্যতম।

ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর

শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান এবং সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার বিবরণ এর মধ্যে যেটার সম্পর্কে না বললেই নয় সেটা হল সিলেটের একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান ভোলাগঞ্জ। বলা হয় এটি দেশের সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারির অঞ্চল। ভোলাগঞ্জ আসলে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একটি মনোরম গ্রাম।

এটি পাথর কেয়ারী, রোপওয়ে, নদী আর পাহাড় মিলে গঠিত।ভোলাগঞ্জের দূরত্ব সিলেট শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার। ধলাই নদী বাংলাদেশের অংশে প্রবেশ করে দুই ভাগে ভাগ হয়ে পিনাই নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। চেরাপুঞ্জি, ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অবস্থিত, পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিপাতপূর্ণ এলাকা। ধলাই নদী এই চেরাপুঞ্জি অঞ্চল থেকেই উৎপন্ন হয়।


ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে এলাকা থেকে দুর্দান্ত দৃশ্য দেখা যায়। বর্ষাকালে, চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির কারণে ধলাই নদীতে পাহাড়ি ঢল দেখা দেয়। পর্যটক সাদা পাথরের উপভোগ করে সবুজ পাহাড় বন্দি এলাকা জুড়ে অজস্র সাদা পাথর, নদীর মনোলোভা রূপ, আকাশের নীল ছোঁয়া, পাহাড়ের উপর মেঘের ছড়াছড়ি তার সাথে দু একটা ঝর্ণা গড়িয়ে পড়া, চিকচিক করা রূপালী বালু আর ছোট বড় অসংখ্য সাদা পাথর মিলে মনে হবে যেন এটা একটা পাথরের রাজ্য। একদম ছবির মত সুন্দর এই জায়গাটার নামই হচ্ছে ভোলাগঞ্জ। এই বর্ণনাতে শীতকালে কথাটা দুইবার এবং সিলেটের দর্শনীয় স্থান এই কথাটা তিনবার এবং সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা তিনবার উল্লেখ থাকবে।

রাতারগুল জলাবন

বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন রাতারগুল, যা সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত। পৃথিবীর মাত্র ২২টি জলাবনের মধ্যে রাতারগুল একটি। এটি ''রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট'' নামে পরিচিত এবং এর আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ৫০৪ একর এলাকাকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

২০১৫ সালের ৩১শে মে, বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর এই এলাকার ২০৪.২৫ হেক্টর বনভূমিকে বিশেষ জীববৈচিত্র সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট গোয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত এবং এটি চেঙ্গির খালের সাথে যুক্ত হয়েছে। এখানে বছরের চার থেকে সাত মাস গাছগুলো পানির নিচে থাকে এবং বর্ষাকালে বন ২০ থেকে ৩০ ফুট পানির নিচে ডুবে যায়। শীতকালে পানির উচ্চতা প্রায় ১০ ফুটের মতো হয়ে থাকে। সিলেট শহর থেকে রাতারগুলের দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার।

রাতারগুলের নামকরণ করা হয়েছে রাতা গাছের নাম থেকে, যা স্থানীয়ভাবে মুর্তা বা পাটি গাছ নামে পরিচিত। বর্ষার মৌসুমে রাতারগুলের সৌন্দর্য সবচেয়ে ভালোমতো উপভোগ করা যায়। বনের ভিতর নৌকা নিয়ে ভ্রমণ করতে হয়, এবং অনুমতি নিতে হয় রাতারগুল বনবিট অফিস থেকে। এটি প্রাণী-বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ, এবং জলমগ্ন থাকায় এখানে সাপের আবাস ও জোঁক পাওয়া যায়। এছাড়া পানকৌড়ি, ঘুঘু, বুলবুলি, টিয়া, মাছরাঙ্গা, বক ও বাজপাখি দেখা যায়। মাছের মধ্যে রিটা, পাবদা, মায়া, টেংরা, খলিসা, কালবাউশ, রুই সহ বিভিন্ন জাতের মাছ পাওয়া যায়।

শীতকালে রাতারগুলের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে, যা সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার মধ্যে রাতারগুলের বিশেষ স্থান রয়েছে।

লালাখাল

শীতকালে সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার মধ্যে লালাখাল অন্যতম। এই স্থানটি সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আলাদা করে নজর কাড়ে। লালাখাল মূলত ভারতের চেরাপুঞ্জির পাহাড় থেকে উৎপন্ন হওয়া একটি নদী যা বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে। এর পানির রং নীল, যা শীতকালে পর্যটকদের আরও আকর্ষণ করে। এই পানির রং নীল হওয়ার কারণ হলো জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে আসা প্রবাহমান পানির সাথে থাকা খনিজ কাদা পরিবর্তে নদীর বালুময় তলদেশ। লালাখালের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গোয়াইন নদী, যা সিলেটের দর্শনীয় স্থান হিসেবে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

ইবনে বতুতা এই নদী দিয়েই প্রথম বাংলাদেশে এসেছিলেন। যদিও এর আসল নাম "সারি", তবুও "খাল" শব্দ যুক্ত হলেও এটি মূলত একটি নদী, কারণ এর প্রবাহমান পানি ভারতের চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে আসে। সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে লালাখাল শীতকালে এক অনন্য রূপে ধরা দেয়। শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে লালাখাল অনন্য স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।

লাকমাছারা ঝরনা

শীতকালে সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে একটি লুকানো রত্ন হলো লাকমাছারা ঝরনা। সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার মধ্যে এটি অন্যতম, যা শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত। তার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের জন্য এটি বিশেষভাবে পরিচিত। শীতকালে এই সিলেটের দর্শনীয় স্থানটি দেখতে পর্যটকরা দূরদূরান্ত থেকে আসেন, যদিও এখানে পৌঁছানো বেশ চ্যালেঞ্জিং ও উত্তেজনাপূর্ণ। লাকমাছারা ঝরনায় যাওয়ার জন্য আপনাকে ঝোপঝাড় এবং পাথুরে পথ পাড়ি দিতে হবে।

জৈন্তাপুর বাজার থেকে লাকমাছারা পর্যন্ত প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। স্থানীয় যানবাহন বা মোটরবাইক ভাড়া করে এই পথ পাড়ি দেওয়া যায়। তারপর একটি সংকীর্ণ পথ ধরে হাঁটতে হয় যেখানে পাহাড়ি ঢাল এবং ছোট নদী পাড়ি দিতে হয়। সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার তালিকায় লাকমাছারা ঝরনাটি বেশীরভাগ পর্যটকের কাছে অজানা থাকলেও প্রকৃতি প্রেমিক এবং অভিযাত্রীদের মধ্যে এটি খুবই জনপ্রিয়। শীতকালে এই সিলেটের দর্শনীয় স্থানটি তার নিজস্ব সৌন্দর্যে সবার মন জয় করে নেয়।

ঝরনার পথে বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণী যেমন পাখি এবং প্রজাপতির দেখা মেলে যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। যেহেতু লাকমাছারা ঝরনা একটি দুর্গম পথ ধরে অবস্থিত, সেজন্য এখানে যাওয়ার ক্ষেত্রে একজন গাইড সঙ্গে নেওয়া ভালো। খাবার, পানি, এবং উপযুক্ত পোশাক সঙ্গে রাখা উচিত। সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে লাকমাছারা ঝরনা তার নীরব এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে সত্যিই অনন্য।

লেখকের মন্তব্য

আজকের এই আর্টিকেলে শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান এবং সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার বিবরণ বিবরণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পাঠকদের জন্য এই আর্টিকেলটি উপকারে আসবে। আপনার এই পোস্টটি পরে ভাল লেগে থাকলে আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন এবং নিত্য নতুন আরও ভ্রমণের তথ্য পেতে পেজটি ফলো করে সাথে থাকুন। আরও জানতে কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url