উন্নত জীবনের জন্য দেশে থাকা ভালো না বিদেশে যাওয়া ভালো

উন্নত জীবনের জন্য দেশে থাকা ভালো না বিদেশে যাওয়া ভালো এইটা এখন প্রতিটি কম বয়সী থেকে শুরু করে মধ্য বয়সী পুরুষ বা মহিলাদের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের আলোচ্য পোস্টে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে তাই পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
উন্নত জীবনের জন্য দেশে থাকা ভাল না বিদেশে যাওয়া ভাল
আমরা অনেকেই উন্নত জীবনের জন্য দেশে থাকা ভালো না বিদেশে যাওয়া ভালো এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা। আজকের পোস্ট এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আপনার সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। চলুন তাহলে দেরি না করে পুরো পোস্টটি পড়ে নেই।

ভূমিকা

উন্নত জীবনের জন্য দেশে থাকা ভালো না বিদেশে যাওয়া ভালো এই বিষয়ে অনেকের অনেক ধরণের মত থাকতে পারে। আলোচ্য পোস্টে চেষ্টা করব এর দুই দিক তুলে ধরার যাতে আপনার কি করা উচিত সেটা সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। 

আজকে আলোচনা করব নিজের দেশের থাকার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, ভাল জীবন মানের জন্য দেশের বাইরে কোথায় পাড়ি জমানো ভাল হবে, প্রবাসীদের জীবন বাইরে কেমন এবং নিজের দেশ এবং বিদেশ এর মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা।

নিজের দেশে থাকার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু

নিজের দেশের থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গেলে বলতে হয় দেশের জন্য কি লাভ। আপনি আপনার মেধা এবং শ্রম আপনার দেশের জন্য দিলে আপনার দেশের জন্য উপকার হবে আর দেশ উপকৃত হলে আপনি এবং আপনার আশপাশের মানুষও উপকৃত হবে। 

অনেকে মনে করেন বিদেশ গেলেই জীবন সুন্দর কিন্তু বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ মানুষই নিজের সন্তানকে বিদেশের থেকে দেশে থাকতে বলেন। এর কারণ তারা মনে করেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেশে ভাল থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চের ‘বিশ্ব মনোভাব’ শীর্ষক এক জরিপে বলা হয়েছে যে উন্নত বা ধনী দেশগুলোর চাইতে উন্নয়নশীল দেশগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বেশি সম্ভাবনাময়। 


একটি উন্নয়নশীল দেশ। তারা আরও বলেছেন যেসব উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেশি সেসব দেশের নাগরিকরা অধিক আশাবাদী। এশিয়া মহাদেশের ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন তারা তাদের পিতামাতার চেয়ে ভাল অবস্থানে থাকবে। এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী মানুষজনের মধ্যে ভিয়েতনামের ৯৫ শতাংশ, ভারতের ৬৭ শতাংশ, চীনের ৮৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ মানুষ। 

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ৬৫ শতাংশ মানুষ মনে করছেন পিতামাতার চেয়ে সন্তানের আর্থিক অবস্থা ভবিষ্যতে আরও খারাপ হবে। পিউ রিসার্চ একটা জরিপ চালিয়েছেন উন্নত জীবনের জন্য দেশে থাকা ভালো না বিদেশে যাওয়া ভালো এর উপর। এতে অংশ নিয়েছিল রাশিয়া, জাপান, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভেনেজুয়েলা,ভারত, পাকিস্তান,দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের মানুষজন। 

এ জরিপে উন্নত জীবনের জন্য শিক্ষা ও কঠোর পরিশ্রমকে বড় নিয়ামক হিসেবে দাবি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উন্নত জীবন মানের জন্য ৬০ শতাংশ শিক্ষা এবং ৫০ শতাংশ কঠোর পরিশ্রমকে কারন হিসেবে দাবি করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সুধু নিজের জন্যই নয় আমাদের আশেপাশের প্রতিবেশীদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করতে হলেও নিজের দেশে থাকাটা জরুরি। 

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। এদেশেই তৈরি হচ্ছে অনেক সম্ভাবনা। তাই নিজের মেধা শ্রম নিজের দেশেই দিয়েই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। 

ভাল জীবন মানের জন্য দেশের বাইরে কোথায় পাড়ি জমানো ভাল হবে

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হলেও এখনও উন্নত দেশের সাথে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা পুরোপুরি হয়নি। এখনও আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ইউরোপ আমেরিকার মত এত উন্নত না। এই কারনে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের ভাল পড়াশোনার জন্য প্রথম পছন্দ বিদেশ। তবে বিদেশে পড়াশোনার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাড়ায় পড়াশোনা আর থাকার খরচ। 

আর এই বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা ও উন্নতজীবনের সঙ্গে খরচের হিসাব যদি মিলে যায় কারও জন্য তাহলে বিদেশ যাওয়ার জন্য পারি জমায়। সে সময় উন্নত জীবনের জন্য দেশে থাকা ভালো না বিদেশে যাওয়া ভালো এই নিয়ে কোন বিভ্রান্তি থাকেনা। নিচে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য এবং ভালো জীবন মানের জন্য কিছু দেশ সম্পর্কে বলা হল,

নরওয়ে

এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পড়াশোনা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের প্রতি সেমিস্টারে ইউনিয়ন ফি ৩০ থেকে ৬০ ইউরো দিতে হয় যা বাংলাদেশি টাকায় দাড়ায় প্রায় ২ হাজার ৮৯০ থেকে ৫ হাজার ৭৮০ টাকা। 

এর মধ্যে আবার বেশ কিছু সুবিধাও আছে যেমন, জাদুঘর পরিদর্শন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,পাবলিক পরিবহন,স্বাস্থ্যসেবা ও ক্রীড়াসহ বেশকিছু। 

মাসিক খরচ

নরওয়েতে জীবনযাত্রার জন্য শহরভেদে খরচের পার্থক্য আছে। বড় শহর গুলতে খরচ বেশি আর ছোট শহরগুলতে খরচ তুলনামূলক কম। এখানে প্রতি মাসে খরচ গুনতে হবে প্রায় ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৭ হাজার থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯০০ টাকার মত। 

ছোট শহরগুলোতে খরচ ৮০০ থেকে এক হাজার ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় প্রায় ৭৭ হাজার থেকে সাড়ে ৯৬ হাজার টাকা।

অস্ট্রিয়া

শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণে অস্ট্রিয়াকে বলা হয় ইউরোপের প্রাণকেন্দ্র। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হতে পারে। এখানেও  বিনামূল্যে পড়াশোনা করানো হয় তবে শুধুমাত্র ইইউ (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন)/ইইএ (ইউরোপিয়ান ইকোনোমিক এরিয়া) অন্তর্ভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীদের। 

নন-ইউ/ইইএ দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য এই সুবিধা নাই। তাদেরকে প্রতি সেমিস্টারে গুনতে হবে টিউশন ফি বাবদ প্রায় ৭৪৬ ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় দাড়ায় ৭১ হাজার ৯২৭ টাকা। 

ভাল দিক

সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না থাকলেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে আছে ইনসব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়, জোহানেস কেপলার ইউনিভার্সিটি লিঞ্জ, গ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়, ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়, ভিয়েনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও লিওবেন বিশ্ববিদ্যালয়।

মাসিক খরচ

এখানে প্রতি মাসে খরচ গুনতে হবে প্রায় ৯০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮৬ হাজার ৭০০ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৩০ টাকার মত। ছোট শহরগুলোতে খরচ ৯০০ থেকে এক হাজার ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় প্রায় ৮৬ হাজার ৭০০ থেকে ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা।

জার্মানি

বিদেশে উচ্চশিক্ষার কথা আসলে শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ থাকে জার্মানি। এখানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় খরচে চলে। ব্যাচেলর কোর্স বা বেশিরভাগ মাস্টার্স কোর্সের জন্য কোন ফি নেওয়া হয়না। তবে যেসব যায়গায় ফি নেই সেটাও তুলনামূলক অনেক কম। 

এখানে শুধু সেমিস্টার কন্ট্রিবিউশন ফি দেওয়া লাগে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য পাবলিক পরিবহন, ক্রীড়া, অনুষদ/বিভাগীয় ছাত্র সংগঠন ও প্রশাসনিক ফির খরচ সরকার বহন করে। 

 মাসিক খরচ

এখানে প্রতি মাসে খরচ গুনতে হয় প্রায় ১০০ থেকে ৩৫০ ইউরোর মত যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯ হাজার ৬৫০ থেকে ৩৩ হাজার ৭৩০ টাকার মত।

ফ্রান্স

ফ্রান্সকে বলা হয় বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্গ। এখানে শিক্ষার্থীরা শুধু পড়াশোনার জন্যই আসেনা তারা পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাতে আকর্ষণীয় কাজের সুযোগের সন্ধানেও থাকে। ফ্রান্সের বৈশ্বিক অর্থনীতি ও ইউরোপীয় বাজারে একটি অভিজাত পদচারণা আছে। সুস্বাদু খাবার সহ ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক, ফ্যাশন, শিল্প-সাহিত্য ও জীবনধারা সব কিছুতেই পরিপূর্ণতা এ দেশ।

মাসিক খরচ

প্যারিস, নিস, লিয়ন, ন্যান্টেস, বোর্দো বা টুলুজের মতো অভিজাত শহরগুলোতে খরচ অনেক বেশি। তবে এগুলো বাদে ছোট শহরগুলোতে থাকলে প্রায় ৬৫০ ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬২ হাজার ৬৫০ টাকা কমে থাকা যাবে। 

তাইওয়ান

এই দ্বীপদেশটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার জন্য একটা আদর্শ জায়গা। এখানে আপনি সংস্কৃতি, ভাষা, প্রযুক্তি, ইতিহাস, রান্না ও প্রাকৃতিক সম্পদসহ অনেক বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ আছে। তাইওয়ান বহুসাংস্কৃতিক ও ইতিহাসসমৃদ্ধ একটি দেশ। 

এখানে খুব সুন্দরভাবে চলাফেরা করা যায়। এ দেশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের খুব আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়। উচ্চশিক্ষার জন্য সাম্প্রতিক এ দেশ খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

মাসিক খরচ

এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে খরচ লাগে প্রতি বছর ৬৭৫ থেকে ১২ হাজার ৭০০ ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৫ হাজার টাকা থেকে ১২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। প্রতি মাসে খরচ গুনতে হয় প্রায় ৬৮০ থেকে ৮৮০ ইউরো বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৫ হাজার ৫৪০ থেকে ৮৪ হাজার ৮২০ টাকা।

পোল্যান্ড

পোল্যান্ডে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৪০০-র বেশি এবং ইউরোপের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এখানে আছে। বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করার জন্য তাদের পছন্দের তালিকায় রাখেন কারণ এখানে ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম নাই। 

ইউরোপীয় দেশসমুহের মধ্যে এটি একটি স্থিতিশীল অর্থনীতির দেশ। এখানে টিউশন ফির জন্য গুনতে হয় প্রায় ২ হাজার ৩৬৮ ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ লাখ ২৮ হাজার ১১০ টাকা।

মাসিক খরচ

প্রতি মাসে খরচ গুনতে হয় প্রায় ৩৫০ থেকে ৫৫০ ইউরো বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৩ হাজার ৭৩৪ থেকে ৫৩ হাজার টাকা। শহর অনুযায়ী এ খরচের পার্থক্য থাকে। 

মালয়েশিয়া

কম খরচে স্বল্প দূরত্বের দেশ হচ্ছে মালয়েশিয়া। পড়াশোনার জন্য এটি একটি ভাল অপশন। এখানে দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পাবলিক ইউনিভার্সিটি হচ্ছে মালায়া যা ২০২২ সালে এশিয়ার শীর্ষ ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান পেয়েছিল। 

এখানে প্রতি বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পরতে খরচ গুনতে হয় যথাক্রমে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার ইউরো বা ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৬০ থেকে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭২০ টাকা এবং ৪৫০ থেকে ৮০০ ইউরো বা প্রায় ৪৩ হাজার ৩৭২ থেকে ৭৭ হাজার টাকা।

মাসিক খরচ

প্রতি মাসে খরচ গুনতে হয় প্রায় ৪৫০ থেকে ৮০০ ইউরো বা প্রায় ৪৩ হাজার ৩৭২ থেকে ৭৭ হাজার টাকা।

তুরস্ক

তুরস্ক এশিয়া ও ইউরোপকে অংশ নিয়ে গড়ে ওঠা একটি দেশ। হট এয়ার বেলুন ট্রিপের জন্য এটি একটি বিখ্যাত জায়গা। এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই মানসম্পন্ন যা সুলতান আব্দুল হামিদ এর আমল থেকে চলে আসছে। 

ইউরোপে স্বীকৃত পাওয়া দেশটি ইউরোপীয় উচ্চশিক্ষা অঞ্চলের অংশ 'বোলোগনা প্রক্রিয়া' হিসেবে পরিচিত। পড়াশোনার জন্য এখানে একজন শিক্ষার্থীকে প্রায় ১০০ থেকে ৪ হাজার ইউরো বা ৯ হাজার ৬৪০ থেকে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫২৬ টাকা গুনতে হয়।

মাসিক খরচ

প্রতি মাসে খরচ গুনতে হয় প্রায় ৪০০ থেকে ৬৫০ ইউরো বা প্রায় ৩৮ হাজার ৫৬০ থেকে ৬২ হাজার ৬৫০ টাকা।

গ্রিস

ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী একটি দেশ গ্রিস। এটি উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি এটি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার নিয়ে আছে গর্ব। এখানে ইংরেজিতে লেখাপড়ার সুবিধাও আছে। এটি ইইউভুক্ত একটি দেশ এবং বোলোগনা প্রক্রিয়া'র সদস্য। 

ইইউভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীরা এখানে বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে পারলেও ননইইউভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীরা যেমন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ব্যাচেলর ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য প্রায় ২ হাজার ইউরো বা ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬০০ থেকে ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৭০ টাকার মত দেওয়া লাগে।

মাসিক খরচ

এখানে সাশ্রয়ী পরিবেশে একজন শিক্ষার্থীর প্রতি মাসে খরচ গুনতে হয় ৪৫০ থেকে ৭৫০ ইউরো বা ৪৩ হাজার ৩৭২ থেকে ৭২ হাজার ২৮৭ টাকা কিন্তু এটি জার্মানি,স্পেন বা ইতালির তুলনায় বেশ সাশ্রয়ী।

হাঙ্গেরি

বৈচিত্র্য ও বহুসংস্কৃতির চমৎকার মেলবন্ধনের কারনে এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি কাড়ে। টিউশন ফির দিক থেকে এটি অনেক সাশ্রয়ী। এখানে একজন বাইরের শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার জন্য প্রত্যেক বছর গুনতে হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৬০ থেকে ৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা।

মাসিক খরচ

এখানে বসবাস করার জন্য দরকার পড়ে ৩৭৫ থেকে ৭০০ ইউরো বা বাংলাদেশি টাকায় ৩৬ হাজার ১৪০ থেকে ৬৭ হাজার ৪৭০ টাকা। শহরভেদে এটি আবার ভিন্ন হয় যেমন বুদাপেস্টে থাকলে খরচ পড়বে প্রায় ৬০০ ইউরো বা প্রায় ৫৭ হাজার ৮৩০ টাকা।

প্রবাসীদের জীবন বাইরে কেমন

প্রবাস জীবন মানে নিজের দেশের মায়া ত্যাগ করে পরিবার পরিজনদের থেকে দূরে থেকে কিছু অতিরিক্ত টাকা অর্জনের জন্য বাইরের দেশে পারি জমানো। এ পাড়ি জমানো কারও জন্য অনেক সুখের আবার কারও জন্য অনেক দুঃখের। 

যারা পড়াশোনা করে ভাল চাকরি বা ব্যবসা করে বাইরে জীবন কাটাচ্ছেন তাদের জন্য সুখকর হলেও যারা শ্রমিক হিসেবে যাচ্ছে আর কষ্টসাধ্য কাজ করার মাধ্যমে নিজ দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন তাদের জীবন অনেক কষ্টের যা এক কথায় প্রকাশ করা যায়না। এই প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা অর্থাৎ রেমিটেন্স বাংলাদেশের রিসার্ভের একটি প্রধান উৎস। 

এখানে কথা বলব সেইসব শ্রমিক প্রবাসী ভাইদের। প্রবাসীদের মধ্যে ৯০ ভাগ শ্রমিক। প্রবাসী শ্রমিক ভাইরা যে বেতন পান এক- তৃতীয়াংশ চলে যাই নিজের নিজের রুম ভাড়া,খাওয়া, মোবাইল ও অন্যান্য খরচে। বাকি দুই- তৃতীয়াংশ পাঠিয়ে দেয় তার পরিবার পরিজনদের কাছে যাতে তারা ভালমতো থাকে। 

নিজে একবেলা না খেয়ে থাকলেও পরিবার পরিজনদের কাছে টাকা পাঠাতে কোন দেরি করেনা। আবার সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকার কারনেও বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানে অর্থ দিয়ে সাহায্য করে থাকে। এর মধ্যে অনেকেই থাকেন যাদের ভাগ্যে ঠিকমত কোন বেতন জুটেনা। 

তারপরও পরিবার যাতে ভাল থাকে সেজন্য এর ওর কাছ থেকে ধার দেনা করে হলেও পরিবারকে টাকা পাঠায় আর বুকের চাপা কষ্ট নিয়ে বলে আমি ভালো আছি। প্রবাসী শ্রমিক ভাইদের কাজ করতে হয় অনেক বিপদজনক কাজ। এ কাজে এমনও হয় অনেক শ্রমিক ভাই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হৃদরোগ, কর্মক্ষেত্রে বা সড়ক দুর্ঘটনায় লাশ হয়ে ফিরে আসে। 

অনেক প্রতিকূল আবহাওয়ার সাথে লড়ায় করে টিকে থাকতে হয় তাদের। বিশেষ করে জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসে ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তাদের কাজ করতে হয়। তাই শ্রমিক ভাইদের প্রবাসী জীবন কখনই সুখকর হয়না।    

নিজের দেশ এবং বিদেশ এর মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা

এখন কথা হচ্ছে উন্নত জীবনের জন্য দেশে থাকা ভালো না বিদেশে যাওয়া ভালো এ বেপারটাই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা পুরটাই আপনার উপর নির্ভর করে। আপনার যদি দেশেই পারিবারিক অবস্থা ভাল থাকে, আর্থিক অবস্থা ভাল থাকে, একটা গোছান সংসার থাকে তাহলে আপনার দেশেই জীবন যাপন করা ভাল হবে। 

এতে আপনি আপনার পরিবার আত্মীয়স্বজনদের সাথে অনায়াসে দেখাসাক্ষাৎ করতে পারবেন। আবার এখন বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থাও উন্নতির দিকে যেখানে বাইরের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক ভাল হলেও ডাক্তারের সময় পেতে থামতে হয় মাসের পর মাস। আপনার ভাল টাকা পয়সা থাকলে আপনার সন্তানদের উচ্চ মানের স্কুল কলেজে ভর্তি করতে পারবেন। 

আর বাইরে গেলে আপনার হইত টাকা অনেক উপার্জন করতে পারবেন কিন্তু তার জন্য আপনাকে পরিবার আত্মীয়স্বজনদের থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি অনেক পরিশ্রম করতে হবে। অসুস্থ হলে আপনাকে একাই নিজের দেখভাল করতে হবে। আমি মনে করি তাদেরই বিদেশ জীবন যাপন করা উচিত যাদের পারিবারিক অবস্থা ভালোনা। 

তারা বিদেশ যেয়ে অর্থ উপার্জন করে পরিবারকে অনায়াসে চালাতে সক্ষম হবে। এর জন্য দেশে থাকার মায়া ত্যাগ করতে হবে। এছাড়াও বাইরের দেশের সিকিউরিটি ব্যবস্থা ভাল থাকে। তবে একজন ভাল মুসলমানের জন্য ইউরোপ কিছুটা কঠিন হয়ে যায় কারণ সেখানে ধর্ম পালনে কিছুটা বাধাগ্রস্থ থাকে। সেক্ষেত্রে মুসলিম দেশে যেতে পারেন। 

আবার গবেষণার জন্য বাংলাদেশের থেকে বাইরের দেশ ভাল। বাংলাদেশে এখনও গবেষণার মান উন্নত হইনি। তাই নিজের ক্যারিয়ারের জন্য বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দেশে এসে দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারেন অথবা সে দেশেই থেকে জেতে পারেন সিদ্ধান্ত আপনার।

লেখকের মন্তব্য 

সবশেষে এটাই বলতে পারি আপনার জীবন আপনার সিদ্ধান্ত। কেও দেশে থাকা পছন্দ করে আবার কেওবা বিদেশে থাকা। দুইটা সিদ্ধান্তকেই আমাদের সম্মান জানানো উচিত কারণ বেঁচে থাকার প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে সুখে থাকা। তাই আপনি যেভাবে সুখে থাকবেন সেভাবেই সিদ্ধান্ত নিবেন। 

যদি আজকের পোস্টটি আপনার ভাল লেগে থাকে তাহলে আপনার প্রিয়জনদের সাতে শেয়ার করুন আর এই পেইজটি ফলো করে সাথে থাকুন। আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url