পুরুষদের মধ্যে যৌন অক্ষমতার কারনসমূহ এবং এর চিকিৎসা পদ্ধতি
বিবাহিত জীবনে পুরুষদের মধ্যে একটি বড় ভয়ের কারন যৌন অক্ষমতা। তাই পুরুষদের মধ্যে যৌন অক্ষমতার কারণসমূহ এবং এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আজকের আলোচ্য পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পুরুষদের মধ্যে যৌন অক্ষমতার ভীতি দূর করতে এই অক্ষমতার কারন এবং এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আজকে বিস্তারিত বলা হয়েছে। চলুন দেরি না করে মূল আলোচনায় চলে যাওয়া যাক।
ভূমিকা
পুরুষদের যৌন অক্ষমতার কারণসমূহ
শারীরিক কারনে যৌন অক্ষমতা
যৌন অক্ষমতা অনেক সময় শারীরিক কারনেও হতে পারে। মানুষের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন, হৃদরোগ, ডায়াবেটিকস, স্নায়ুরোগ, রক্তনালীসংক্রান্ত রোগ, হরমোন ভারসাম্যহীনতা, দুরারোগ্যব্যাধি ইত্যাদি। এছাড়াও অতিরিক্ত নেশাগ্রস্ত জাতিয় দ্রব্য সেবনের অভ্যাস, কিডনি বা লিভারের রোগ এবং ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের যৌন আকাঙ্ক্ষাকে হ্রাস করে।
আমাদের যৌন আকাঙ্ক্ষার পেছনে মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে টেস্টোস্টেরন হরমোন। এই টেস্টোস্টেরন হরমোনের উপর নির্ভর করে একজন পুরুষের পারফরমেন্স। বয়ঃসন্ধিকালের পর এই হরমোনের মাত্রা হঠাত বেড়ে যায় যার ফলে একটি ছেলের পুরুষ হয়ে উঠার প্রক্রিয়া শুরু হয় যেমন দাঁড়ি গোঁফ উঠা, জননাঙ্গের পরিপূর্ণ আকার, ঘাম, যৌনাঙ্গের পরিপক্বতা, মানুষিকভাবে পুরুষালি আচরণ ইত্যাদি শুরু হয়।
লিঙ্গ নির্ধারণী হরমোন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে পুরুষদের যৌন অক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ কারণগুলো ছাড়াও ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত এন্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ সেবনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় যা পুরুষের যৌন আকাঙ্ক্ষাকে প্রভাবিত করে।
মানুষিক কারনে যৌন অক্ষমতা
সব সময় যে শারীরিক কারনেই পুরুষদের মধ্যে যৌন অক্ষমতা তৈরি হয় এমনটা নয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে মানুষিক কারনেও যৌন অক্ষমতা তৈরি হয়। মানুষিক কারণগুলোর মধ্যে পড়ে দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, কর্মস্থলের চাপ ও অস্থিরতা, অপরাধবোধ, সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা, অতীতের কোন বাজে অভিজ্ঞতায় ট্রমায় থাকা ইত্যাদি।এগুলো ছাড়াও আরেকটি কারন যা বর্তমান যুগের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা দিচ্ছে আর তা হল পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে যাওয়া।
টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি বলতে কি বোঝায়
পুরুষদের মধ্যে যৌন অক্ষমতার প্রধান কারন হচ্ছে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি।টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি বলতে এমন এটা অবস্থা বোঝানো হয় যখন অণ্ডকোষ পর্যাপ্ত টেস্টোস্টেরন উৎপাদন করতে পারেনা একে হাইপোগোনাডিজম বা লো-টি(Low-T) বলা হয়। স্বাভাবিকভাবেই এর মাত্রা ৩০ বছর বয়সের পর এক-শতাংশ হারে প্রতি বছর কমতে থাকে কিন্তু এছাড়াও যদি বাহ্যিক কোন কারন দ্বারা
এটি প্রভাবিত হয় বা কমতে থাকে তাহলে এটাকে ঘাটতি বলা হয়।পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি হওয়ার একটি স্বাভাবিক কারন হচ্ছে, বয়ঃসন্ধিকালে বা এর আশেপাশের সময়ে যখন কারও মাম্পস হয় তখন তার মাম্পস অর্কাইটিস হয়। আর এটি শুধু গলা নয় গলা ছাড়াও অণ্ডকোষকেও আক্রান্ত করে যার দরুন এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি দেখা যায়।
এই অণ্ডকোষ থেকেই টেস্টোস্টেরন উৎপাদিত হয়।আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে হরমোনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে তাই খেয়াল রাখতে হবে যেন দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি না হয়।এটি রাখতে হবে এক থেকে দের ডিগ্রী কম। এছাড়াও টেস্টোস্টেরনের ঘাটতিতে নিম্নোক্ত কারণসমূহ তুলে ধরা হল,
- পরিবেশের এমন কিছু ক্ষতিকর উপাদান থাকে যা শরীরে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতিতে প্রভাব ফেলে।
- শারীরিক স্থুলতা।শরীরে অতিরিক্ত মেদ শরীরে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতিতে প্রভাব ফেলে।
- রক্তে শর্করার পরিমাণ এবং ডায়াবেটিকস বেশি থাকলে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতি দেখা যায়।
- বিভিন্ন ধরনের রেডিয়েশন এবং কেমোথেরাপির জন্যও টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতি দেখা যায়।
- কোন দুর্ঘটনা বা আঘাতজনিত কারনে অণ্ডকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে।
- মস্তিষ্কে আঘাত, লিভার সিরোসিস, অতিরিক্ত মদ্যপান, ঘুমের সমস্যা, কিডনির সংক্রমণ ইত্যাদির কারনেও এ হরমোনের ঘটতি হতে পারে।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের এক গবেষণায়, পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রার উপর একটি পরিসংখ্যান করা হয়। এতে বলা হয়েছে পুরুষদের মধ্যে যারা স্থূলকায় তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম থাকে। স্বাভাবিক ওজনের পুরুষদের মধ্যে এই হার মাত্র ৬ শতাংশ। যেসব পুরুষদের টাইপ-২ ডায়াবেটিকস রয়েছে তাদের মধ্যে এই হার ৬ শতাংশ।
যৌন অক্ষমতার লক্ষণসমূহ
আপনি কখন বুঝবেন আপনার যৌন অক্ষমতা তৈরি হয়েছে বা টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি রয়েছে সে লক্ষণসমূহ নিচে তুলে ধরা হল,
- লিঙ্গের প্রয়োজনীয় উত্থান ঘটবে না।
- যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাবে।
- দ্রুত বীর্যপাত হবে।
- শুক্রাণুর উৎপাদন কমে যাবে।
- অণ্ডকোষ সংকুচিত হয়ে যাবে।
- বিলম্বে বীর্যপাত দেখা দিবে।
- বন্ধ্যাত্ব দেখা দিবে।
- অ্যানোরগাজমিয়া দেখা যাবে অর্থাৎ পর্যাপ্ত উত্তেজনা সত্ত্বেও অর্গাজম হবে না।
পুরুষদের যৌন অক্ষমতার চিকিৎসাপদ্ধতি
পুরুষদের মধ্যে যৌন অক্ষমতা যেমন চিন্তার বিষয় তেমনি এর সমাধানও আছে। এর থেকে বাঁচার চিকিৎসাপদ্ধতিসমূহ নিচে তুলে ধরা হল,
- এ ধরণের সমস্যাই ভুগলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
- নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
- ডায়াবেটিকস, হৃদরোগ বা অন্যকোন জাতীয় সমস্যা থাকলে সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- সব ধরণের নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের অভ্যাস করুন।
- মানুষিক শান্তি, চাপ, অবসাদ প্রভৃতি থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।
- এর সমাধানে এই লিঙ্কে চাপ দিন।
- অশ্বগন্ধা সেবন যৌন আকাঙ্ক্ষা দূরীকরণে একটি ভাল সমাধান।
আরও পড়ুনঃ অশ্বগন্ধার প্রয়োজনীয়তা এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা
এগুলো ছাড়াও আরেকটি চিকিৎসা পদ্ধতি আছে যার নাম এক্সট্রাকরপরিয়াল শক ওয়েভ থেরাপি(ESWT)। এই চিকিৎসাপদ্ধতিতে কোন রকমের ইনজেকশন বা অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নেই।
লেখকের মন্তব্য
সবশেষে এটা বলা যায়, সুখী বিবাহিত জীবন মানে সুস্থ স্বাভাবিক সেক্স লাইফ। এটাকে কেন্দ্র করে অনেক পরিবারে বিচ্ছেদের মত ঘটনা ঘটে তাই পুরুষদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে এবং এ ব্যাপারে কোন অবহেলা করা যাবে না। আপনার এই পোস্টটি পরে ভাল লেগে থাকলে আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন এবং নিত্য নতুন আরও তথ্য পেতে পেজটি ফলো করে সাথে থাকুন। আরও জানতে কমেন্ট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url