মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) এর লক্ষণসমূহ এবং চিকিৎসা
ভূমিকা
বারি,স্কুল,অফিস ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় অস্থিরতা কাজ করে মনোযোগ বসে না। এর কারন একটাই মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD)। এটি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের মধ্যেই থাকতে পারে কিন্তু দৃশ্যমান হবে এমনটা নয়। আজকের পোস্টে মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) কি এর এর লক্ষণসমূহ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) কি?
মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) বলতে বোঝায় আমাদের মধ্যে যে অমনোযোগীতা, বিভ্রান্তি, অস্থিরতা, যেকোনো সময়ের জন্য একটি জিনিসে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া এসব আচরণসমূহ। এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায় কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝেও পরিলক্ষিত হয়।
আরও পড়ুনঃ ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী এডিস মশার হাত থেকে বাঁচতে ১০টি কার্যকরী উপায়সমূহ
মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার(Attention-deficit/hyperactivity disorder) প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মহিলাদের থেকে পুরুষদের মধ্যে তিনগুণ বেশি বেশি দেখা যায় এবং বিশ্বব্যাপী ৫ থেকে ৭ শতাংশ শিশুদের মধ্যে ঘটে। এটি মস্তিষ্কের সাথে সম্পর্কিত একটি ব্যাধি। ১৯৯০ সালে এর নামকরন অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার(ADHD) দেওয়া হয় তার আগে এর নাম ADD বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট ডিসঅর্ডার ছিল।
মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) এর ধরণ
এর ধরণ চার ধরণের হয় যেমন,
- প্রধানত অমনোযোগী উপস্থাপনাঃ এই ধাপ পূর্বে মনোযোগ-ঘাটতি ব্যাধি (ADD) নামে পরিচিত ছিল। এই ধাপে শিশুরা প্রাথমিকভাবে অমনোযোগের সাথে লড়াই করে। তাদের মধ্যে কম হাইপারঅ্যাকটিভিটি/ইম্পলসিভিটি লক্ষণ দেখা যায়। এর সাথে শিশুরা এই ধাপে ফোকাস করা, কাজ সঙ্ঘটিত করা এবং ট্র্যাকে থাকা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করে।
- হাইপারঅ্যাকটিভ-ইম্পালসিভ উপস্থাপনা: এই ধাপে শিশুরা মনোযোগের অসুবিধা সহ অতিসক্রিয়তা এবং আবেগপ্রবণতা প্রদর্শন করে। অতি-সক্রিয় আচরণের মধ্যে রয়েছে অস্থিরতা, স্থির হয়ে বসতে না পারা, অত্যধিক শক্তি এবং কথাবার্তা।
- সম্মিলিত উপস্থাপনা: এই ধাপে শিশুরা অমনোযোগী এবং হাইপার-অ্যাকটিভ-ইম্পালসিভ উভয় প্রকারের কমপক্ষে ছয়টি উপসর্গ প্রদর্শন করে এবং উভয় উপসর্গ সমানভাবে ঘটে। এটি মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) এর সর্বাধিক স্বীকৃত রূপ, যা প্রায় 70% ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত।
- অনির্দিষ্ট উপস্থাপনা: কিছু কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণগুলি গুরুতর হতে পারে। আবার কোন ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রকারে ADHD নির্ণয়ের মানদণ্ডের সাথে সঠিকভাবে মানানসই নাও হতে পারে।
মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) এর লক্ষণসমূহ
আপনার শিশুর মধ্যে মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার আছে কিনা সেটা জানা খুবই জরুরী। আপনি যে লক্ষণগুলির মাধ্যমে বুঝবেন আপনার বা আপনার শিশুর এই ব্যাধি আছে তা নিম্নরূপ,
- মনোযোগ ধরে রাখতে অসুবিধা।
- সহজেই বিভ্রান্ত সৃষ্টি হওয়া।
- প্রায় ভুলে যাওয়া।
- ঠিকমত শুনতে না পাওয়া।
- কাজ সংগঠিত করতে সমস্যার সৃষ্টি হওয়া।
- প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কথা বলা।
- অসাবধানতাবশত ভুল করে ফেলা।
- কখনও কখনও কোন কারন ছাড়াই ধ্রুবক গতি দেয়া।
- ধিরস্থির ভাবে এক জায়গায় বসে থাকতে না পারা।
- প্রায়শই বা বারবার কোন জিনিস ভুলে যাওয়া বা হারিয়ে ফেলা।
- যেকোনো কার্যকলাপে শান্ত থাকতে না পারা।
- প্রচণ্ড চঞ্চল হওয়া।
- কোন একটি কাজে মনোনিবেশ করে সেটা পরিপূর্ণভাবে সমাপ্তি করতে টেকসই মানসিক প্রচেষ্টার অভাব দেখা দেওয়া।
- দিবাস্বপ্ন দেখার প্রবণতা দেখা দিবে অনেক।
- অনুপস্থিত মানসিকতা থাকবে।
- অস্থির এবং সহজেই বিরক্ত হওয়ার প্রবণতা।
- সহজ নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে অসুবিধা।
- অন্যের কথা বলার সময় বাধা দেওয়ার প্রবণতা।
- ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করতে না পারা।
- হাইপারঅ্যাকটিভিটি দিনের বেলায় অনেক দেখা দেয়।
- বন্ধুত্ব করতে অসুবিধা।
- প্রলোভন প্রতিরোধ করতে অক্ষমতা।
- স্কুলে ফোকাস করতে না পারা।
- খুব দ্রুত মুড সুইং করে।
মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) এর জটিলতাগুলো কি?
- কম আত্মসম্মান অনুভূত হওয়া।
- হতাশা এবং উদ্বেগের লক্ষণ দেখা দিবে।
- খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম দেখা দিবে।
- ঘুমের ব্যাঘাত হবে।
- যেকোনো বস্তু ব্যবহারে অসুবিধা সৃষ্টি হবে।
- ঝুঁকিপূর্ণ এবং আবেগপ্রবণ আচরণে জড়িত হওয়া।
বিতর্ক-মানসিক ব্যাধি না মনের অবস্থা?
মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) এর চিকিৎসা
ঔষধ দেওয়াঃ মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণত উদ্দীপক ওষুধ যেমন মেথাইলফেনিডেট (রিটালিন, কনসার্টা) এবং অ্যামফিটামিন-ভিত্তিক ওষুধ (অ্যাডারাল, ভিভানসে) দেওয়া হয়। যারা উদ্দীপক সহ্য করতে পারে না যেমন শিশুরা তাদের ক্ষেত্রে অ-উত্তেজক ওষুধ যেমন অ্যাটোমক্সেটাইন (স্ট্রাটেরা) এবং গুয়ানফেসাইন (ইন্টুনিভ) দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ নিজেকে সুস্থ রাখার ১৬টি সহজ উপায়
অভিভাবক প্রশিক্ষণঃ মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) আক্রান্ত শিশুদের জন্য বাবা মা সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এই জন্য তারা পিতামাতার প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলিতে যোগদান করতে পারে।
কাউন্সেলিং এবং থেরাপিঃ দক্ষতা বিকাশে, আবেগ পরিচালনা করতে এবং আত্ম-সম্মান উন্নত করতে সাইকোথেরাপি, যেমন স্বতন্ত্র কাউন্সেলিং বা গ্রুপ থেরাপি সহায়তা করতে পারে।
জীবনধারা পরিবর্তনঃ মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম পুষ্টি এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মতো স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অনুশীলনগুলি করা যেতে পারে।
মননশীলতা এবং শিথিলকরণ কৌশলঃ ধ্যান, যোগব্যায়াম এবং গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলনের মতো অনুশীলনগুলি ADHD আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফোকাস উন্নত করতে, চাপ কমাতে এবং আত্ম-সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url