২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম কানুন এবং আয়কর আইন বা জরিমানা

আমারা যারা চাকুরীজীবী বা ব্যবসার সাথে জড়িত অনেকেই জানিনা  ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম কানুন এবং আয়কর আইন বা জরিমানা। এইজন্য অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। আজকের পোস্টে এই সম্পর্কে বলার চেষ্টা করেছি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম কানুন এবং আয়কর আইন বা জরিমানা

ইনকাম ট্যাক্স প্রতিটি চাকুরীজীবী বা ব্যবসায়ীর জন্য একটি আতংকের নাম। একটি গণতান্ত্রিক দেশে ইনকাম ট্যাক্স দেওয়া প্রতিটি সামর্থবান চাকুরীজীবী বা ব্যবসায়ীর চাকুরীজীবী বা ব্যবসায়ীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে তাই চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম কানুন এবং আয়কর আইন বা জরিমানা।

ভূমিকা

বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। একটি গণতান্ত্রিক দেশে যেসব নিয়ম মানুষদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয় তার মধ্যে ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর একটি। এটি প্রতিটি  সামর্থবান চাকুরীজীবী বা ব্যবসায়ীর জন্য আবশ্যক। ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর একটি দেশের উন্নতির পেছনে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে যদিও আমাদের দেশে ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর দেওয়ার প্রবণতা খুবই কম। বেশীরভাগ চেষ্টা করে  ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর ফাকি দেওয়ার। এর জন্য আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধান আছে। আজকে এ নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।  

ইনকাম ট্যাক্স কি

ইনকাম ট্যাক্স হল একটি সরাসরি কর যা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয়ের উপর নির্ধারিত হয়। সরকারের প্রধান যেসব রাজস্ব আয়ের উৎসগুলো আছে তার মধ্যে এটি একটি। এটি সরকারের কার্যক্রম এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য অর্থ সরবরাহ করে। 

আরও পড়ুনঃ উন্নত জীবনের জন্য দেশে থাকা ভালো না বিদেশে যাওয়া ভালো

ইনকাম ট্যাক্স বিভিন্ন উৎস থেকে অর্জিত আয়ের উপর আরোপিত হয়। এই উৎসগুলোর মধ্যে আছে বেতন, ব্যবসায়িক লাভ, সম্পত্তির আয়, মূলধ্বনি লাভ এবং উৎস অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। 

আয়কর আইন ২০২৪-২০২৫অনুযায়ী ট্যাক্স রেট কিভাবে নির্ধারণ হয়

ট্যাক্স রেট বিভিন্ন দেশের আইন অনুযায়ী বিভিন্ন হয় এবং এটি নির্দিষ্ট আয়ের স্তরের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশের আয়কর ব্যবস্থাটি একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত হয়, যা বিভিন্ন আয়ের স্তরের জন্য প্রগতিশীল কর হারের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। 

করদাতাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল এবং কর প্রদান করতে হয়, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশে ব্যক্তিগত ইনকাম ট্যাক্স নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিম্নরূপ,

ব্যক্তিগত আয়কর রেট(২০২৪-২০২৫ অর্থবছর)

বেসিক কর রেটঃ 

  • ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্তঃ কর মুক্ত
  • ৪,০০,০০১ থেকে ৬,০০,০০০ টাকা পর্যন্তঃ ১০%
  • ৬,০০,০০১ থেকে ১২,০০,০০০ টাকা পর্যন্তঃ ১৫%
  • ১২,০০,০০১ থেকে ৩০,০০,০০০ টাকা পর্যন্তঃ ২০%
  • ৩০,০০,০০০ টাকার উপরেঃ ২৫%

 নারী ও প্রবীণ নাগরিক(৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে)

৪,৫০,০০০ টাকা পর্যন্তঃ কর মুক্ত

প্রতিবন্ধী ব্যক্তি

৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্তঃ কর মুক্ত

মুক্তিযোদ্ধা

৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্তঃ কর মুক্ত

আয়কর নির্ধারণ হয় বেতন, ব্যবসা বা পেশা থেকে অর্জিত আয়, সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয়, মুলধনী লাভ এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত আয় ( উদাহরণঃ লভ্যাংশ, সুদ)

আয়কর আইন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম কানুন

আয়কর আইন ২০২৪-২০২৫ অনুযায়ী বাংলাদেশে করদাতাদের সাধারণত নিম্নলিখিত ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়,

  • ব্যক্তি
  • হিন্দু অপ্রত্যক্ষ স্বত্বভোগী
  • অসংযুক্ত পরিবার
  • কোম্পানি
  • প্রতিষ্ঠান 
আয়কর আইন অনুযায়ী ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর দেওয়ার নিয়মকানুন নিম্নে দেওয়া হল,
  • প্রতি বছর ৩০ নভেম্বর এর মধ্যে রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা।
  • অনলাইনে বা স্থানীয় কর অফিসে গিয়ে রিটার্ন দাখিল কর যায়।
  • প্রথমবারের জন্য কর রিটার্ন দাখিলকারীদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অর্থাৎ NBR ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। 
  • আয়ের প্রমাণপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিনিয়োগের তথ্য, বায়ের রসিদ সংগ্রহ করতে হবে।
  • নির্ধারিত আয়কর রিটার্ন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
  • পূরণকৃত ফর্ম এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস অনলাইনে আপলোড করতে হবে বা স্থানীয় কর অফিসে জমা দিতে হবে।
  • কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কর ছাড় পাওয়া যায় যেমন, জীবন বীমা প্রিমিয়াম, স্বাস্থ্য বীমা প্রিমিয়াম, শিক্ষার বায় এবং বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে। 
  • নির্দিষ্ট আয় যেমন বেতন এর ক্ষেত্রে অগ্রিম কর কেটে রাখা হয় যেটাকে বলা হয় TDS অর্থাৎ ট্যাক্স ডিডাক্টেড অ্যাট সোর্স।
  • করদাতারা অনলাইনে ব্যাংকের মাধ্যমে বা স্থানীয় কর অফিসে কর পরিশোধ করতে পারবেন। কর পরিশোধের পর অবশ্যই স্লিপ সংগ্রহ করবেন।
  • পুরনাঙ্গ ফর্ম ও নথিসহ আয়কর রিটার্ন ফর্ম আপনার নিকটস্থ কর অফিসে জমা দিতে হবে অথবা অনলাইনে দাখিল করতে হবে। রিটার্ন দাখিলের পর একটা রিসিভ কপি সংরক্ষণ করবেন।
  • কর অফিসার আপনার দাখিলকৃত রিটার্ন পরিদর্শন করবেন এবং নির্ধারণ করবেন আপনার কর সঠিকভাবে পরিশোধ হয়েছে কিনা। 

আয়কর আইন ২০২৪-২০২৫বা জরিমানা 

বাংলাদেশে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে বা কর পরিশোধ না করলে বিভিন্ন ধরণের জরিমানা বা শাস্তি আরোপিত হয়। নিম্নে আয়কর আইন বা জরিমানা সম্পর্কে বলা হল,

আয়কর আইন ২০২৪-২০২৫ অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল না করলে

যদি কোন করদাতা নির্ধারিত সময়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করে তবে ধারা ১১৮ অ্যাক্ট অনুযায়ী তাকে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা প্রতিদিন দিতে হবে অথবা যে পরিমাণ কর ধার্য হবে তার ৫০% আরও বেশি দিতে হবে।

আয়কর আইন ২০২৪-২০২৫ অনুযায়ী অডিট এবং অতিরিক্ত কর

আয়কর অডিটঃ নির্দিষ্ট সময়ে রিটার্ন দাখিল না হলে অথবা গোপনীয় আয়ের তথ্য থাকলে আয়কর অডিট হতে পারে। এতে আয়করকে অতিরিক্ত কর প্রদান করা লাগতে পারে। 

কর ফাঁকিঃ কেও যদি ইচ্ছাকৃত কর ফাঁকি দেয় বা ধরা পড়ে তাহলে কর অফিসার কর্তৃক অতিরিক্ত জরিমানা নির্ধারিত হবে।

আয়কর আইন ২০২৪-২০২৫অনুযায়ী কর অব্যাহতিপত্র না পেলে

কর  অব্যাহতিপত্র না পেলে  যেমন ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্সে সার্টিফিকেট না পেলে আয়কর আইন বা জরিমানা হবে। নির্দিষ্ট সময়ের পর পরিশোধ না করলে জরিমানা বেড়ে যাবে।

ব্যবসায়িক ক্ষতি

কর না দিলে ব্যবসায়িক অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় যেমন, ব্যবসায়িক লেনদেন, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন বা ব্যাংক ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।

ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর ফাকি দিলে অথবা রিটার্ন দাখিল না করলে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে, যার মধ্যে পরে ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ, সম্পত্তি বায়েজাপ্ত অন্তর্ভুক্ত।

ফৌজদারি শাস্তি

কর ফাঁকির পরিমাণ বেশি হলে এবং ইচ্ছাকৃত কর ফাঁকি দেওয়া প্রমাণিত হলে করদাতার জেলও হতে পারে। এই শাস্তির মেয়াদ ৩ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

ধরেন যদি আপনি নির্ধারিত সময়ের পর ১০ দিন দেরিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন তাহলে আপনাকে প্রতিদিনের ৫০০ টাকা হিসেবে মোট ৫০০০ টাকা বেশি কর দিতে হবে। যত দেরি করবেন তত কর বেশি হবে। 

লেখকের মন্তব্য

বাংলাদেশের ইনকাম ট্যাক্স ব্যবস্থা অনেক পুরনো হলেও আধুনিকায়নের প্রক্রিয়াটি সাম্প্রতিককালে গতিশীল হয়েছে। স্বাধীনতার পর আয়কর ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে জাতিয় রাজস্ব বোর্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। 

ডিজিটালাইজেশন ও ই- ফাইলিংয়ের মাধ্যমে সেবার মান উন্নত হয়েছে তবে কর ফাঁকি ও কর আদায়ের চ্যালেন্জ এখনও বিদ্যমান যা সুষ্ঠু রাজস্ব ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করে। আজকের এই পোস্টটি আপনাদের ভাল লেগে থাকলে আপনার পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করুন এবং কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url