ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী এডিস মশার হাত থেকে বাঁচতে ১০টি কার্যকরী উপায়সমূহ

ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী এডিস মশার হাত থেকে বাঁচতে ১০টি কার্যকরী উপায়সমূহ আপনারা যদি জানার আগ্রহ নিয়ে বসে থাকেন আজকের পোস্টটিতে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে জানতে পুরো পোস্টটি আপনি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী এডিস মশার হাত থেকে বাঁচতে ১০টি কার্যকরী উপায়সমূহ

বর্তমানে ডেঙ্গু একটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। এ  ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী এডিস মশার হাত থেকে বাঁচতে ১০টি কার্যকরী উপায়সমূহ জানতে চলুন দেরি না করে মুল আলোচনায় চলে যায়।

ভূমিকা

বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনে সবচেয়ে আতঙ্কের নাম মশা আর এ মশা যদি হয় এডিস যা ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী তাহলে আতংকের ভয়াবহতা আরও বেড়ে যায়। শুধুমাত্র এ প্রজাতির মশাই ডেঙ্গুর ভাইরাস বহন করে তাই এ মশা কামড়ালে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী এডিস মশার হাত থেকে বাঁচতে ১০টি কার্যকরী উপায়সমূহ আজকের পোস্টে আমরা জানার চেষ্টা করব।

ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী এডিস মশা সম্পর্কে ধারণা

এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে থাকে। এর আকার মাঝারি আকৃতির এবং খালি চোখে দেখা যায়। এ মশাকে সহজেই অন্য মশা থেকে আলাদা করতে পারবেন কারন এর গায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকে। এর মাথায় লোমশ টাইপের দুটো অ্যান্টেনা আছে তবে পুরুষ মশার অ্যান্টেনা ইস্ত্রি মশার চেয়ে বেশি লোমশ থাকে। 

এডিস মশা দিনের বেলা বিশেষ করে সূর্য উঠার ৩-৪ ঘণ্টা পর এবং বিকেল ও সন্ধ্যার মাঝামাঝি সময় বেশি কামড়ায়। সচারচর এরা রাতের বেলা কামড়ায় না তবে অনেকের ধারণামতে এটি উজ্জ্বল আলোতে রাতের বেলাও কামড়ায়। এটি শরীরের যেকোনো স্থানে কামড়াতে পারে। এডিস মশা কামড় দিলেই যে ডেঙ্গু হবে এমনটা নয়। 

যে মশাটি ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করবে সেটি যদি কামড়ায় তাহলে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও ডেঙ্গু আক্রান্ত কোন রোগীর দেহে কামড় দিয়ে তারপর সুস্থ কোন মানুষের দেহে কামড় দিয়ে যদি জীবাণু প্রবেশ করায় তাহলেও ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ মশা কোথায় ডিম পারে বা বসবাস করে সে সম্পর্কে কীটপতঙ্গ বিশেষজ্ঞ ডি নাগপাল জানিয়েছেন এগুলো বসবাস করে,

  • দেয়ালে ঝুলে থাকা বোতল।
  • পুরনো জুতা।
  • ফুলের টব।
  • পরিত্যক্ত খেলনা।
  • ড্রাম বা ব্যারেল।
  • অন্যান্য জলাধার।
  • পোষা প্রাণীর পাত্র।
  • নির্মাণাধীন ভবনের ব্লক।
  • ফেলে রাখা বোতল ও টিনের ক্যান।
  • গাছের ফোকর ও বাঁশ।
  • ছাদ।
  •  অঙ্কুরোদ্গম উদ্ভিদ।
  • বাগান পরিচর্যার জিনিসপত্র।
  • ইটের গর্ত ও অপরিচ্ছন্ন সুইমিং পুলে এডিস মশা জন্ম নেয়।
  • পুরনো টায়ার।
  • লন্ড্রি ট্যাংক।
  • ঢাকনাবিহীন চৌবাচ্চা।

এডিস প্রজাতির সদস্য সংখ্যা অনেক হলেও সাধারণত দুই প্রজাতির এডিস মশা ভাইরাস বহন করে এগুলো হল,

  • aegypti এবং
  • albopictus

ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী এডিস মশার হাত থেকে বাঁচতে ১০টি কার্যকরী উপায়সমূহ

বাংলাদেশে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে। এর শিকার শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই তাই এর থেকে বাঁচতে আমাদের কিছু পদক্ষেপ সম্পর্কে জেনে নেওয়া ভাল। এডিস মশার হাত থেকে বাঁচতে নিম্নের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরা হল,

সুগন্ধির ব্যবহার

এডিস মশার হাত থেকে বাঁচতে সুগন্ধির ব্যবহার একটি কার্যকরী উপায়। মশা গন্ধ যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বেশ পারদর্শী। অনেক ধরণের গন্ধের প্রতি মশা আকৃষ্ট হলেও বেশ কিছু সুগন্ধি মশাদের একেবারেই পছন্দের নয়। এসব সুগন্ধির মধ্যে রয়েছে ল্যাভেন্ডার, ইউক্যালিপটাস, লেমনগ্রাস এবং পিপারমেন্ট এর গন্ধ যা আপনি শোবার ঘরে কিংবা বাসার যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করলে মশা দূরে থাকবে। আপনি বাজার থেকে এয়ার ফ্রেশনার কিনেও বাসায় ব্যবহার করতে পারেন।

রসুনের স্প্রে করা

রসুনের অনেক গুনাবলি আছে। একে "পাওয়ার হাউজ অব মেডিসিন এন্ড ফ্লেভার" বলা হয়। এটি পোকা-মাকড় দমনেও কাজে লাগানো যায়। প্রাচীন সভ্যতায় পোকামাকড় দমনে রসুন ব্যবহার করা হত। প্লেগ দমনে মধ্যযুগে ইউরোপীয়রা রসুন ব্যবহার করেছিলেন তাই আপনিও মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে রসুনের স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। এই স্প্রে বানানো খুবই সহজ। রসুনের খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে পানিতে ফুটিয়ে নিন তারপর এই রসালো পানিটা স্প্রে বোতলে নিয়ে ঘরের দরজা জানালার কোনায় স্প্রে করলে আশা করা যায় মশা থাকবে না। 

মশা তাড়ানোর ক্ষেত্রে ঘরের রঙের ভূমিকা

ঘরের রঙের প্রতি মশা সংবেদনশীল হয়ে থাকে। মূলত মশা খুব উজ্জ্বল যেকোনো রঙ থেকে দূরে থাকে। এক্ষেত্রে মশা আকৃষ্ট হয় কালো, নেভি ব্লু, লাল, কমলা ইত্যাদি রঙের প্রতি। পক্ষান্তরে নীল, বেগুনি, সবুজ ও সাদা রঙ থেকে মশা দূরে থাকে। এক্ষেত্রে আমরা এক কাজ করতে পারি শোবার ঘরের দেয়াল, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, গায়ের পোশাক ইত্যাদির ক্ষেত্রে মশার অপছন্দের রঙের ব্যবহার করা যেতে পারে। 

মশা থেকে বাঁচতে তুলসীর ব্যবহার 

তুলসী পাতার উপকারিতা আমরা অনেকেই জানি। সাধারণত ঠাণ্ডা-কাশিতে তুলসি ব্যবহার হয়ে থাকে কিন্তু এটা যে মশা তাড়ানোর ক্ষেত্রেও অনেক কার্যকরী তা আমরা অনেকেই জানিনা। তুলসী পাতা পানিতে ফুটিয়ে বোতলে নিয়ে ঘরের বিভিন্ন কোনায় স্প্রে করলে মশা দূর করতে সাহায্য করবে। প্যারাসাইটোলজি রিসার্চ জার্নালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে তুলসী মশার লার্ভা ধ্বংস ও মশা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও আপনি ছোট টবে তুলসী গাছ ঘরের এক কোনায় রেখে দিবেন। 

জানালায় জাল দেওয়া

ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী এডিস মশার হাত থেকে বাঁচতে আরেকটি খুব কার্যকরী উপায় জানালায় জাল দেওয়া। এখন বাজারে এসব জাল কিনতে পাওয়া যায়। জালনায় জাল দিলে ঘরে বাতাস প্রবাহে কোন বাধা পাবেনা কিন্তু একই সাথে মশাও ঢুকতে পারবে না। এতে আপনি জানালা খোলা রেখে ঘুমোতে পারবেন।

মশা তাড়াতে পুদিনার তেল ব্যবহার 

আপনি জেনে অবাক হবেন যে পুদিনা মশা তাড়ানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী একটি জিনিস। আমরা অনেকেই জানি পুদিনার তেলে মেন্থল থাকায় এটি ব্যথা নিরাময়ে এবং ঠাণ্ডায় আরাম দেয়। জার্নাল অব বায়োরিসোর্স টেকনোলজি এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মশা দূরে রাখতে পুদিনা পাতার ভূমিকা রয়েছে। পুদিনা পাতার গন্ধে মশা দূরে থাকে। পুদিনা পাতার তেল বানানো খুবই সহজ। একটি ছোট বোতলে নারিকেল তেল নিয়ে তাতে দুই তিনটা পুদিনা পাতা থেঁতলে ২-৩ দিন ডুবিয়ে রাখতে হবে। তারপর তেলটি ছেঁকে নিতে হবে। 

গোসল করার অভ্যাস করুন

শরীরের ঘামের গন্ধে মশা আকৃষ্ট হয় বেশি তাই ঘামের গন্ধ দূর করতে প্রতিদিন গোসলের অভ্যাস করুন। এরপর জামা-কাপড়, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার ইত্যাদি মাঝে মাঝে পরিষ্কার করুন।

লেবু ও লবঙ্গের ব্যবহার

একটি লেবু অর্ধেকটা কাটুন। এরপর তার উপর কয়েকটা লবঙ্গ গেঁথে দিন যাতে লবঙ্গের মাথা বের হয়ে থাকে। এখন ঘরের কোনায় বা জানালার কাছে রেখে দিন। মশা আশা করি দূর হবে তার সাথে মিষ্টি সুঘ্রাণও ছড়াবে।

মশারি ব্যবহার করতে হবে

আগের সব উপায় কার্যকরী করলেও ঘুমানোর আগে অবশ্যই মশারি দিতে হবে। মশারি দিতে অনেকেই অলসবোধ করে কিন্তু ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী এডিস মশার হাত থেকে বাঁচতে মশারি দেওয়াটা বাঞ্ছনীয়।

মশার হাত থেকে বাঁচতে নিমের তেল ব্যবহার

নিম পাতার উপকারিতার কথা না বললেই নয়। অ্যালার্জি ও ইনফেকশনজনিত অসুখের ক্ষেত্রে নিম পাতার ব্যবহার বেশ কার্যকরী। নিমের তেলকে প্রাকৃতিক মসকিউটো রিপেলেন্ট বলা হয়। ত্বকের যত্ন ছাড়াও মশা তাড়ানোর ক্ষেত্রেও নিমের তেল খুবই কার্যকরী। এক কাপ পরিমাণ নারিকেল তেলে কয়েকটা নিমের পাতা দিয়ে ফুটিয়ে ছেঁকে বোতলে করে রেখে দিবেন।

লেখকের মন্তব্য

ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী এডিস মশা খুব খুদ্র হলেও এটি খুব শক্তিশালী। এর দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুর কোলে ঢলে যেতে পারে যা আমরা বিগত কয়েকবছর থেকে দেখে আসছি তাই আমাদের উচিত এর থেকে পরিত্রাণ। আজকের আলোচ্য পোস্টে এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে। যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করুন অ্যান্ড কমেন্ট করে পাশে থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url