ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে রাসেল ভাইপার সাপ

ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে রাসেল ভাইপার সাপ এইটা শুনে হয়ত আপনারা অনেকেই আতংকিত হচ্ছেন। আজকের আলোচনায় এই নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আমাদের সতর্ক থাকার জন্য এই সাপের সম্পর্কে জানা অতি জরুরী তাই আজকের পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে রাসেল ভাইপার সাপ

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এই সাপের কামড়ে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে যা খুবই চিন্তার বিষয়। তার থেকে চিন্তার বিষয় ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে রাসেল ভাইপার সাপ। এই ব্যাপারে জানতে চলুন মূল আলোচনায় চলে যাওয়া যাক। 

ভূমিকা 

রাসেল ভাইপার সাপ দক্ষিণ এশিয়ার একটি বিষাক্ত সাপ যা বাংলাদেশসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। এই সাপের উপস্থিতি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষভাবে দেখা দিয়েছে, কারন এটি কৃষি কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং মানুষের জন্য মারাত্মক বিপদের কারন হতে পারে।হিমালয়াস এবং তিব্বতের পর্বতীয় অঞ্চলে বিস্তৃতভাবে পাওয়া যায় এই বিশেষ ধরণের সাপ রাসেল ভাইপার। আজকের আলোচনায় আমরা জানব এই রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে এবং কিভাবে বাংলাদেশে এই সাপ ঢুকে পড়ছে।

রাসেল ভাইপার সাপের বৈশিষ্ট্য

ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা রাসেল ভাইপার সাপ মূলত দক্ষিণ আমেরিকা এবং পূর্ব এশিয়ায় দেখতে পাওয়া যায়।  এটির লম্বা, পারদর্শী লেজ এবং রঙিন চামড়া এর কারণে এটি প্রাকৃতিক পরিবেশে ভাল ভাবে লুকিয়ে থাকতে পারে। এদের গায়ের রঙ সাধারণত ধূসর, বাদামি, বা মাটির রঙের হতে পারে। পৃথিবীতে যত বিষধর সাপ আছে তার মধ্যে রাসেল ভাইপার এর অবস্থান পঞ্চম। রাসেল ভাইপার সাপ ‘চন্দ্রবোড়া’ নামেও পরিচিত। 

আরও পড়ুনঃ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম কানুন এবং আয়কর আইন বা জরিমানা

এদের লম্বা বিষদাঁত আছে। প্রায় প্রায় ১৫-১৬ মিমি দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে এই রাসেল ভাইপারের দাঁত।যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে এই সাপের কামড়ের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে শুরু হতে পারে বা কয়েক ঘণ্টা পরেও হতে পারে।

বাংলাদেশে রাসেল ভাইপার সাপের আগমন ও বর্তমান পরিস্থিতি

রাসেল ভাইপার সাপ বাংলাদেশে আগমনের ইতিহাস এবং বংশবিস্তার করার কারন সম্পর্কে জানতে গেলে বাংলাদেশের প্রকৃতিগত এবং ভূগোলিক কিছু বিষয় আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে। এই সাপের আদি আবাসস্থল ভারতীয় উপমহাদেশে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার স্থানীয় প্রজাতি হিসেবে পরিচিত।

ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং নেপালে রাসেল ভাইপার সাপ সাধারণত দেখা যায়। চিন্তার বিষয় বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং পরিবেশের সাথে এ সাপের উপযুক্ত জীবনযাপন ব্যবস্থা মিলে যায় যার ফলে এটি স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করেছে। 

রাসেল ভাইপার সাপের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ হচ্ছে শুষ্ক ও উষ্ণ পরিবেশ যা বাংলাদেশের জলবায়ুর সাথে মিলে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী এবং ময়মনসিংহের পাহাড়ি এবং পাথুরে এলাকা, ধানক্ষেত এবং চা বাগান রাসেল ভাইপার সাপের জন্য আদর্শ জায়গা। 

এসব অঞ্চলের পরিবেশ এবং ভূমির প্রকৃতি এ সাপের বসবাস এবং প্রজননের জন্য উপযুক্ত স্থান। বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি প্রধান হওয়ার কারনে এখানে ফসল চাষের জন্য প্রচুর জমি ব্যবহার করা হয়। রাসেল ভাইপার সাপ ধানক্ষেত এবং অন্যান্য ফসলের জমিতে বেশি দেখা যায়। 

জমি চাষের সময় কৃষকেরা  এ সাপের দংশের শিকার হয় বেশি। বাংলাদেশের অনেক গ্রাম অঞ্চলে সাপ সম্পর্কে সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অভাব রয়েছে। রাসেল ভাইপার সাপের মানুষের বসবাসের এলাকায় চলে আসার প্রধান কারন হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তন এবং বনভূমি ধ্বংস। 

সাপের দংশন প্রতিরোধ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। এ সাপ আগে বাংলাদেশে ছিলনা এদানিং কালে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে রাসেল ভাইপার সাপ। চিন্তার বিষয় সচেতনতার অভাব এবং সঠিক চিকিৎসার অপ্রতুলতার কারনে এ সাপের দংশনে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। 

জার্নাল অব দি এশিয়াটিক সোসাইাটি, বাংলাদেশে প্রকাশিত হয় ২০১৩ থেকে ২০১৬ এই চার বছরে বাংলাদেশের প্রায় ২০টি অঞ্চলে রাসেলস ভাইপার দংশনের ঘটনা ঘটেছে। আরও জানা গেছে বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে ১৭ টি জেলাতেই এ সাপের উপস্থিতি রয়েছে।

সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি পাওয়া যায় রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। বাংলাদেশে এই সাপের বংশবিস্তার এত ধরা পরেনি তবে এদানিং এ সাপের বংশবিস্তার বৃদ্ধির কারন হিসেবে বলা হচ্ছে কই জমিতে বছরে একাধিক ফসল ফলানো। 

সবচেয়ে মজার বিষয়  ৯০' এর দশকের আগে যখন সেচ পদ্ধতির উন্নত ব্যবস্থা ছিলনা তখন ফসলি জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকত বেশি সময় কিন্তু সেচ পদ্ধতির উন্নতির সাথে সাথে জমিতে একাধিক ফসল ফলানো হচ্ছে ফলে জমিতে ইঁদুরের উৎপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে আর এই ইঁদুর সাপের অন্যতম খাবার তাই সাপ তাদের পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে আর বংশবৃদ্ধি করছে।

রাসেল ভাইপার সাপের ভয়াবহতা

রাসেল ভাইপার সাপের বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং দ্রুত কার্যকর। এতে উপস্থিত হেমোটক্সিন যা রক্ত জমাট বাধা এবং রক্তপাত ঘটায় এবং নিউরোটক্সিক স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে যা শ্বাসপ্রশ্বাস এবং হৃদযন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। এ সাপ দংশনে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়,

  • প্রচণ্ড ব্যথা এবং ফোলা।
  • রক্তক্ষরণ এবং ব্যথাস্থানে ফোসকা।
  • বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরা।
  • রক্তচাপ কমে যাওয়া।
  • কিডনি বিকল হওয়া।

মৃত্যুর ঘটনা

ফরিদপুরের বাসিন্দা কৃষক বিশা প্রামাণিক গত ৭ মার্চ, ২০২৪ সরিষা কাটতে গিয়ে দুপুর ১২ টায় রাসেল ভাইপার সাপের দংশনের শিকার হন। এরপর তাকে তিন জায়গায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিন্তু তার শেষ রক্ষা হয়নি। 

৩৬ দিন পর ১৩ এপ্রিল,২০২৪ তিনি ইন্তেকাল করেন। এরকম আরেকটি ঘটনা সাঈদুল শেখ নামের এক কৃষক রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ভুট্টাক্ষেত পরিচর্যাকালে ৮ এপ্রিল, ২০২৪ এ সাপের কামড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়াও গোয়ালন্দের দেবীপুর চরে ২৯ মার্চ,২০২৪ সালে ময়না বেগম নামের এক শ্রমিক এ সাপের ছোবলে মারা যান। 

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

এ সাপের দংশন থেকে বাঁচতে নিচে কিছু প্রতিরোধমূলক বাবস্থা সম্পর্কে বলা হল,

  • বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড় এবং পাথুরে এলাকা পরিষ্কার রাখা। 
  • রাতের বেলা বা ঝোপঝাড়ে কাজ করার সময় সাপের কামড় এড়ানোর জন্য পায়ে বুট জুতা এবং সুরক্ষামূলক পোশাক পরিধান করা।
  • গ্রামীণ এলাকায় এ সাপের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং এর প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানানো।
  • সাপের দংশনের পর দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা।
  • গ্রামের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম সরবরাহ করা।
  • স্থানীয় মানুষদের সাপ ধরার প্রশিক্ষন দেওয়া।
  • সাপের প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংরক্ষন করা যাতে তারা মানুষের আবাবস্থল থেকে দূরে থাকে।
  • স্বাস্থ্যকর্মীদের সাপের দংশনের চিকিৎসা এবং অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের প্রশিক্ষণ দেওয়া।

লেখকের মন্তব্য

রাসেল ভাইপার সাপের দংশন একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি প্রতিরোধে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। পাঠকদের প্রতি আমার একটাই অনুরোধ আপনারা নিজেরা সতর্ক থাকবেন আর আপনার আসে পাশের সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক করবেন। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করবেন, ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url