পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ১২ টি স্মার্ট উপায়
পড়ালেখায় মনোযোগী হতে না পারা এখনকার সময়ে খুবই চিন্তার বিষয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যারা জীবনে ভাল কিছু করতে চাই কিন্তু মনোযোগী হতে পারছিনা। আজকের আলোচনায় পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ১২ টি স্মার্ট উপায় নিয়ে আলোচনা করব যাতে এ সমস্যার সমাধান পেতে পারি। বিস্তারিত জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
সমাজের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পড়ালেখার বিকল্প কিছু নেই কিন্তু এই পড়ালেখায় যখন মনোযোগ বসেনা তখন জীবন নিয়ে আমরা শঙ্কিত হয় তাই দরকার পড়ালেখায় মনোযোগ ফিরিয়ে আনা। পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ১২ টি স্মার্ট উপায় জানতে দ্রুত নিচের আলোচনায় চলে যান।
ভূমিকা
পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়া শিক্ষার্থীদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি শুধু একাডেমিক সাফল্যই নয় বরং জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও উন্নতি এনে দেয়। মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং তাদের লক্ষে পৌছাতে সাহায্য করে।
পড়ালেখার প্রতি সঠিক মনোভাব এবং পরিকল্পনা থাকলে কঠিন বিষয়গুলোও সহজ হয়ে যায়। এর জন্য দরকার পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ১২ টি স্মার্ট উপায় যা আজকের আলোচনায় নিয়ে আসছি। আজকে আপনি জানতে পারবেন কত সহজেই ১০টি উপায় অবলম্বন করে পড়ালেখায় মনোযোগ ফিরিয়ে আনা যায়।
পড়ালেখায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলি কেন
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ১২ টি স্মার্ট উপায় জানার আগে আমাদের জানতে হবে আমরা পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলি কেন। এ ব্যাপারে নিচে আলোচনা করা হল,
উৎসাহের অভাবঃ যে বিষয়ে পড়াশোনা করবেন সে বিষয়বস্তু যদি আপনার কাছে আকর্ষণীয় না হয় তাহলে মনোযোগ হারিয়ে ফেলবেন।
প্রস্তুতির অভাবঃ সঠিক প্রস্তুতি যদি না থাকে যেমন, নিয়মিত বিরতিতে যদি পড়াশোনা না করা যায় তাহলে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হতে পারে।
বাহ্যিক বিঘ্নঃ আশেপাশের আওয়াজ যেমন, ফোন, টেলিভিশন ইত্যাদি মনোযোগ নষ্ট করে।
স্বাস্থ্যগত সমস্যাঃ ঘুমের অভাব, পুষ্টির অভাব বা শারীরিক অসুস্থতা মনোযোগে প্রভাব ফেলে।
মানুসিক চাপঃ পরীক্ষা কিংবা অন্যান্য দায়িত্ব নিয়ে চিন্তা করার ফলে মনোযোগ নষ্ট হতে পারে।
দীর্ঘ সময় ধরে পড়াঃ বিরতি ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনা করলে মনোযোগ হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
অসংগঠিত পড়াশোনাঃ সঠিক পরিকল্পনা বা রুটিন না থাকলে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন।
মাল্টিটাস্কিংঃ একই সময়ে একাধিক কাজ করার চেষ্টা থাকলে মনোযোগ নষ্ট হয়।
মোটিভেশনের অভাবঃ সঠিক উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য না থাকলে পড়াশোনায় মনোযোগ রাখা কঠিন হয়।
দুশ্চিন্তাঃ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অতিরিক্ত চিন্তা মনোযোগের বিঘ্ন ঘটায়।
অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারঃ সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার মনোযোগ হ্রাস করে।
আবেগজনিত সমস্যাঃ ব্যক্তিগত সমস্যা বা আবেগজনিত অসুবিধা মনোযোগে প্রভাব ফেলে।
পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবঃ পড়াশোনার মধ্যে পর্যাপ্ত বিরতি না থাকলে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন।
অতিরিক্ত চাপঃ অধিক পড়াশোনার চাপ মনোযোগ হ্রাস করে।
উপযুক্ত পরিবেশের অভাবঃ একটি শান্ত ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ না থাকলে মনোযোগ হারাতে পারেন।
অপেক্ষাঃ পড়ার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষা করলেও মনোযোগ হারাতে পারেন।
অভ্যাসের অভাবঃ নিয়মিত পড়াশোনার অভ্যাস না থাকলে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন।
বিভ্রান্তিকর লক্ষ্যঃ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন।
আত্মবিশ্বাসের অভাবঃ আত্মবিশ্বাসের অভাব মনোযোগে প্রভাব ফেলে।
শারীরিক অস্বস্তিঃ পড়ার সময় শারীরিক অস্বস্তি যেমন, অসুবিধাজনক চেয়ার মনোযোগ হ্রাস করতে পারে।
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ১২ টি স্মার্ট উপায়
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়া শুধু ফলাফল অর্জনের জন্য নয় বরং জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের জন্যও অপরিহার্য। মনোযোগী হয়ে পড়াশোনা করলে বিষয়বস্তুর গভীরে প্রবেশ করা যায় যা শিক্ষাজীবনের সফলতার ভিত্তি স্থাপন করে, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বপ্ন পূরণের পথে সাহায্য করে, তথ্যগুলো মনে রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করে, সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, মানুসিক চাপ কমে এবং প্রশান্তি আসে, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটায় ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ মনোযোগ ঘাটতি বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) এর লক্ষণসমূহ এবং চিকিৎসা
এই মনোযোগ ধরে রাখায় যেন আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখনই পড়াশোনা করতে বসা হয় তখনই বিভিন্ন চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। নিচে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ১২ টি স্মার্ট উপায় তুলে ধরা হল,
সঠিক একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে
পড়াশোনায় মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে প্রথম শর্তই হচ্ছে সঠিক পড়াশোনার পরিবেশ নির্ধারণ করা। সঠিক পড়াশোনার পরিবেশ বলতে বোঝায় যেন বাইরের থেকে আওয়াজ না শোনা যায়, পড়াশোনায় জায়গা যেন পরিষ্কার পরিছন্ন থাকে, বইখাতা যেন অগোছালো না থাকে ইত্যাদি।
লক্ষ্য স্থির করা
যেন কোন কাজে লক্ষ্য নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি পড়াশোনায় মনোযোগ আনতেও লক্ষ্য নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্য ঠিক না থাকলে কি উদ্দেশে পড়াশোনা করছেন তা বুঝতে পারবেন না তখনই পড়াশোনায় মনোযোগ আনতে পারবেন না তাই কি জন্য পড়াশোনা করবেন তার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
রুটিন তৈরি করে পড়া
পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে রুটিন তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোন সময় কোন বিষয়টা নিয়ে পড়াশোনা করব সেটার যদি একটা রুটিন তৈরি করে নেই তাহলে পড়াশোনায় মনোযোগ আসে। আপনি যে বিষয়তে দুর্বল রুটিন এ সে বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিবেন। সে বিষয়গুলোতে রুটিন এ বেশি সময় রাখবেন। রুটিন এর মধ্যে অবশ্যই বিরতি রাখবেন যাতে একঘেয়েমি না চলে আসে।
টেবিলে বসে পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন
আমাদের অনেকের মধ্যেই বিছানায় বা সোফায় বসে বা শুয়ে পড়ার অভ্যাস আছে। এভাবে পড়াশোনা করলে ঘুম চলে আসার সম্ভাবনা থাকে তাই অতি দ্রুতই এই অভ্যাস ত্যাগ করুন এবং টেবিল এ পড়াশোনা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
নিয়মিত ব্যায়াম বা খেলাধুলা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন
ব্যায়াম বা খেলাধুলা আমাদের মনকে প্রফুল্ল রাখে। দৈনিক কমপক্ষে এক ঘণ্টা ব্যায়াম বা খেলাধুলার অভ্যাস গড়ে তুলুন। পড়াশোনায় মনোযোগ আনতে এইটি একটি অত্যন্ত কার্যকরী উপায়।
আরও পড়ুনঃ নিজেকে সুস্থ রাখার ১৬টি সহজ উপায়
একসঙ্গে একাধিক কাজ না করা
বর্তমানে আমাদের একটা বাজে অভ্যাস গড়ে উঠেছে পড়াশোনার সময় মোবাইল, ইন্টারনেট এবং টেলিভিশন দেখি এতে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে যায়। তাই পড়াশোনার সময় শুধুমাত্র পড়াশোনায় যেন করা হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
ঘুম আমাদের মস্তিষ্ক গঠন করে। আমাদের মাথা ঠাণ্ডা রাখে। মনোযোগ ধরে রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুম অত্যন্ত জরুরী। ভাল এবং সময়মত ঘুম না হলে মস্তিষ্ক ঠিক থাকেনা এতে মনোযোগ ধরে রাখতে অসুবিধা হয়। দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন এবং রাত জাগা থেকে বিরত থাকুন।
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করুন
নামাযের ফযিলত অনেক। আপনি যদি প্রতিদিন সঠিক সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন তাহলে আপনার মন প্রফুল্ল থাকবে এবং কাজ কর্মে এবং পড়াশোনায় উদ্দামতা পাবেন। এর সাথে প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করার অভ্যাস গড়ে তুলুন দেখবেন আপনার পড়াশোনায় কাজ কর্মে আল্লাহ বরকত দিবেন ইনস শা আল্লাহ এবং মনোযোগ আশ্চর্যজনকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
মনোযোগ বিনষ্টকারী জিনিস দূরে রাখা
ডিজিটাল যেসমস্ত ডিভাইস আছে যেমন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন এগুলো পড়াশোনার টেবিল থেকে দূরে রাখুন। এসব যন্ত্র পড়াশোনায় মনোযোগ বিনষ্টের জন্য যথেষ্ট। মোবাইল বা ল্যাপটপ পাশে থাকলে কিছুক্ষণ পর পর নোটিফিকেশন আসবে আর আপনার মন চাইবে একটু দেখি কি আসছে। এতেই আপনার সময় কখন ডিভাইসে পার হয়ে যাবে আপনি বুজতেও পারবেন না।
ধ্যান বা মেডিটেশন করার অভ্যাস করা
ধ্যান বা মেডিটেশন আপনাকে পড়াশোনায় মনোযোগ আনতে সহায়তা করে। এটি আপনার মনকে শান্তি দেয়।
প্রকৃতির মাঝে ঘুরাফিরা করেন
মাঝে মাঝে প্রকৃতির কাছে চলে যান যেখানে পানি বয়ে যাওয়ার শব্দ, পাখির কিচিরমিচির আপনার মনকে শান্ত করবে আর ভাবতে সাহায্য করবে। চিন্তা শক্তি বাড়াবে এতে পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়বে।
নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন
নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেললেও মনোযোগের ঘাটতি দেখা যায়। আপনার দ্বারা হবেনা এ ধরনের চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলুন। নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন আপনার দাড়ায় হবে।
লেখকের মন্তব্য
সবশেষে বলতে পারি পড়াশোনা আমাদের প্রত্যেকের জীবনের জন্য খুবই দরকারি একটা বিষয়। এ ব্যাপারে আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা মনোযোগ হারিয়ে না ফেলি। উপরোক্ত টিপস যদি মেনে চলেন আশা করি এ সমস্যার সমাধান মিলবে। যদি এ পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করে পাশে থাকুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url