কালো জাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচার আমল সম্পর্কে জানুন

পৃথিবীতে নানান ধরনের মানুষ রয়েছে, এবং তাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যদের কষ্ট দেয়। কেউ সরাসরি আঘাত করে, আবার কেউ গোপনে ক্ষতি করার জন্য কালো জাদুর কৌশল অবলম্বন করে। এই কালো জাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচার আমল সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

কালো জাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচার আমল সম্পর্কে জানুন

জাদুটোনা থেকে রক্ষা পেতে কিছু বিশেষ আমল পালন করতে হয়। জাদুটোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। কালো জাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচার আমল সম্পর্কে জানতে দ্রুত মূল আলোচনায় চলে যান। 

ভূমিকা

কালো জাদু এক ধরনের অদৃশ্য শক্তির ব্যবহার যা মানুষের ক্ষতি সাধন করার উদ্দেশ্যে করা হয়। এটি তন্ত্রমন্ত্র এবং জাদুর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। কালো জাদুর উদ্দেশ্য সাধারণত মানুষের জীবনে অশান্তি ও অসুখ-বিসুখ ঘটানো। ইসলামে কালো জাদুর বিরুদ্ধে সতর্কতা ও প্রতিরোধের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এর মোকাবেলায় ঈমান ও আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা অপরিহার্য।

আরও পড়ুনঃ

জিলহাজ মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহ এবং মক্কায় হজ পালনের নিয়ম-২০২৪।

মুসলিমদের উৎসব আশুরার তাৎপর্য এবং কারবালার শিক্ষা। 

কালো জাদু কি

কালো জাদু, যা সাধারণভাবে ব্ল্যাক ম্যাজিক নামে পরিচিত একটি ধরণের অন্ধকার জাদু যা সাধারণত ব্যক্তিগত স্বার্থে, প্রতিশোধ নিতে অথবা অন্যকে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এটি বেশিরভাগ সংস্কৃতিতে এবং ধর্মীয় বিশ্বাসে অমঙ্গলকর ও নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। 

কালো জাদুর মূল উদ্দেশ্য হল শত্রুর উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করা, তাদের ক্ষতি করা অথবা তাদের জীবনে অশান্তি আনা। কালো জাদু সাধারণত জাদুকরের দ্বারা তাদের নিজের বা অন্যের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে করা হয়। এটি জাদুয়ার মন্ত্র, যন্ত্রপাতি এবং কখনও কখনও অশুভ শক্তির সাহায্যে পরিচালিত হয়। 

কালো জাদুর প্রভাব হতে পারে শারীরিক, মানসিক  বা আধ্যাত্মিক। এর মধ্যে কিছু সাধারণ প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করে যেমন, শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক উদ্বেগ, সম্পর্কের সমস্যা এবং পারিবারিক অশান্তি। কালো জাদুর প্রভাব প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন ধরণের আমল বা প্রতিকার অনুসরণ করা হয়। 

এই প্রতিকারগুলি প্রায়ই আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় আস্থা ও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে থাকে। কিছু সাধারণ প্রতিকার অন্তর্ভুক্ত করে: নিয়মিত ধর্মীয় উপাসনা, মন্ত্র পাঠ, বিশেষ দোয়া এবং আধ্যাত্মিক সুরক্ষা বা প্রোটেকশন। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিকার হল "কালো জাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচার আমল," যা সাধারণত বিশেষ মন্ত্র এবং দোয়া সম্পর্কিত হয়। 

এই আমলগুলি কালো জাদুর প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং সাধারণত ধর্মীয় গুরু বা আধ্যাত্মিক পরামর্শকের নির্দেশনায় পালন করা হয়। কালো জাদুর সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতনতা ও শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মানুষের জীবনে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। 

সামাজিক এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সাহায্য নিয়ে এ ধরণের অন্ধকার শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব। অতএব, যেকোনো আধ্যাত্মিক বা জাদু সম্পর্কিত সমস্যার ক্ষেত্রে একজন দক্ষ পরামর্শক বা বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া উচিত।

কালো জাদুর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য 

  • উদ্দেশ্য: কালো জাদু সাধারণত ব্যক্তিগত লাভের জন্য, অথবা কাউকে ক্ষতি করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি কখনও কখনও প্রতিশোধ নেওয়া বা একজন ব্যক্তির ওপর প্রভাব বিস্তার করার উদ্দেশ্যে করা হয়।
  • অধিকার: কালো জাদু সাধারণত জাদুকরের দ্বারা তাদের নিজের বা অন্যদের প্রতি শক্তি প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা কখনও কখনও অন্ধকার শক্তি বা শক্তিশালী অশুভ শক্তির সহায়তা নিয়ে করা হয়।
  • প্রচলিত বিশ্বাস: অনেক সংস্কৃতিতে কালো জাদুর প্রতি ভয় এবং সন্দেহ থাকে। এই প্রকার জাদু বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে নিষিদ্ধ এবং ক্ষতিকর মনে করা হয়।
  • সাধারণ প্র্যাকটিস: কালো জাদুর সাধারণ প্র্যাকটিসের মধ্যে রয়েছে মন্ত্র পাঠ, যন্ত্রপাতি ব্যবহার এবং অন্যান্য আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ড। এই প্র্যাকটিসগুলি প্রায়ই গোপন রাখা হয় এবং সঠিকভাবে না জানলে বিপজ্জনক হতে পারে।
  • সামাজিক প্রভাব: কালো জাদুর বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ সম্পর্কে শিক্ষিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটি সাধারণত সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং মানুষের মধ্যে ভয় বা বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে।

কালো জাদু থেকে বাচার দোয়া

যদি জানা যায় যে, যাদুকর কিছু চুল কোনো নির্দিষ্ট স্থানে, যেমন চিরুনির মধ্যে বা অন্য কোথাও রেখে দিয়েছে তাহলে সেই স্থানের সন্ধান পাওয়া গেলে সেই বস্তুটি ধ্বংস করে ফেলা উচিত যেমন পুড়িয়ে ফেলা। এতে যাদুর প্রভাব কমে যায় এবং যাদুকরের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। 

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন একটি বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে। তিনি উল্লেখ করতেন, এই দোয়াই ছিল সেই দোয়া যার মাধ্যমে তোমাদের পূর্বপুরুষ [ইবরাহিম (আ.)] ইসমাঈল ও ইসহাকের জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন।

"আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়তানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।"

অর্থঃ আমি আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ ও শক্তিশালী বাণীর মাধ্যমে প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং ক্ষতিকর দৃষ্টির কুপ্রভাব থেকে সুরক্ষা প্রার্থনা করছি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩৭১)

কালো জাদু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ইসলামিক শিক্ষায় কিছু নির্দিষ্ট দোয়া এবং আমল সুপারিশ করা হয়েছে। এই দোয়াগুলি আল্লাহর কাছে সরাসরি প্রার্থনা করা হয় যাতে তিনি কুপ্রভাব এবং শয়তানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করেন। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া এবং আমল বর্ণনা করা হলো,

আয়াতুল কুরসি 

আয়াতুল কুরসি (সুরা আল-বাকারা ২:২৫৫) কালো জাদু এবং শয়তানি প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী আয়াত হিসেবে বিবেচিত। আল্লাহর ক্ষমতা এবং সুরক্ষার কথা এই আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। এই আয়াতটি নিয়মিত পড়া হলে তা ব্যক্তিকে শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

উসমান বিন আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি  নিম্নোক্ত এই দোয়াটি সকাল ও সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে সমস্ত বিপদাপদ থেকে নিরাপদ রাখবেন। আরেকটি বর্ণনায় উল্লেখ আছে, আল্লাহ তাআলা তাকে সব ধরনের রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষা প্রদান করবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৮)

"বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামাই ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।"

অর্থঃ আল্লাহ তাআলার নামে, যাঁর নামের কল্যাণে আকাশ ও মাটির কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সবকিছু শোনেন ও সবকিছু জানেন।

সুরা আল-ইখলাস, আল-ফালাক এবং আন-নাস

এই তিনটি সুরা (কুল সিরিজ) প্রতিদিন সকালে এবং রাতে তিনবার করে পড়তে সুপারিশ করা হয়েছে। সুরা আল-ফালাক এবং সুরা আন-নাস শয়তানের ক্ষতি এবং যাদুটোনার প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।

দু'আ রুকইয়াহ

দু'আ রুকইয়াহ হাদিসে উল্লেখিত একাধিক দোয়ার সংকলন যা শয়তানি প্রভাব, রোগ, এবং কালো জাদু থেকে মুক্তির জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, এক হাদিসে এসেছে যে, নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহর নামে আমি তোমাকে সুরক্ষা দিচ্ছি, তোমার সমস্ত কিছু থেকে যা তোমাকে কষ্ট দেয়, সব শয়তানি আত্মা বা ক্ষতিকর চোখ থেকে। আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করে দিক। আমি আল্লাহর নামে তোমাকে সুরক্ষা দিচ্ছি।”

সুরা ত্বহার নিম্নোক্ত আয়াতগুলো তেলাওয়াত করা

قَالُوا يَا مُوسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَى (65) قَالَ بَلْ أَلْقُوا فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَى (66) فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُوسَى (67) قُلْنَا لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعْلَى (68) وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى (69)

অর্থ: তারা বলল, "হে মুসা, তুমি আগে নিক্ষেপ করবে, না আমরা আগে নিক্ষেপ করবো?"মূসা বললেন, "তোমরা আগে নিক্ষেপ করো।" তখন তাদের যাদুর প্রভাবে মূসা লক্ষ্য করলেন যে তাদের রশি ও লাঠিগুলো দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করেছে। এতে মূসার মনে কিছুটা ভয় ও উদ্বেগ দেখা দিল। তখন আমি বললাম, "ভয় পেও না, তুমি অবশ্যই বিজয়ী হবে। তোমার ডান হাতে যা রয়েছে, তা নিক্ষেপ করো; এটি তাদের তৈরি সবকিছু গ্রাস করে ফেলবে। কারণ তারা যা করেছে, তা কেবলমাত্র যাদুকরের কারসাজি। আর যেখানেই যাদুকর থাকুক, সে কখনো সফল হবে না।" (সুরা ত্বহা, আয়াত: ৬৫-৬৯)

সুরা ইউনুসের নিম্নোক্ত আয়াতগুলো তেলাওয়াত করা

وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُونِي بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (79) فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُمْ مُوسَى أَلْقُوا مَا أَنْتُمْ مُلْقُونَ (80) فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَى مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ (81) وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ

অর্থ: ফেরাউন বললেন, "আমার কাছে দক্ষ যাদুকরদের আনো।" যখন যাদুকররা উপস্থিত হলো, মুসা তাদেরকে বললেন, "নিক্ষেপ করো, তোমরা যা কিছু নিক্ষেপ করতে চাও।" তারপর যখন তারা নিক্ষেপ করলো, মুসা বললেন, "যা কিছু তোমরা এনেছ, সবই যাদু। এখন আল্লাহ তা ধ্বংস করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অনৈতিক কাজের সুষ্ঠুতা দেন না। আল্লাহ তাঁর নির্দেশে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন, যদিও পাপীদের এটি পছন্দ নয়।" (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৭৯-৮২)

নিয়মিত ইবাদত ও তাওবা করা

নিয়মিত নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত করা এবং আল্লাহর কাছে তাওবা করা কালো জাদুর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা হলে এবং পাপ থেকে বিরত থাকা হলে শয়তান এবং তার কুপ্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

পবিত্রতা রক্ষা

নিজেকে এবং নিজের চারপাশকে পবিত্র রাখা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত অজু করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং শয়তানি প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য নিয়মিত দোয়া করা কালো জাদু থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি উপায়।

কালো জাদুর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে এই দোয়াগুলি এবং আমলগুলি নিয়মিত পালন করা উচিত। সর্বোপরি, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

কুফরি কর্ম বা যাদু দূর করতে ঝাড়ফুঁকের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। এর পদ্ধতি হলো, যাদু দ্বারা আক্রান্ত রোগীর উপর অথবা একটি পাত্রে আয়াতুল কুরসি বা সুরা আরাফ, সুরা ইউনুস এবং সুরা ত্বহা’র যাদু সম্পর্কিত আয়াতগুলো পাঠ করা উচিত। পাশাপাশি, সুরা কাফিরুন, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, এবং সুরা নাস তেলাওয়াত করা এবং রোগীর জন্য বিশেষ দোয়া করা প্রয়োজন।

اللَّهُمَّ ربَّ النَّاسِ، أَذْهِب الْبَأسَ، واشْفِ، أَنْتَ الشَّافي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفاءً لاَ يُغَادِرُ سقَماً

"আল্লাহুম্মা রব্বান নাস আযহিবিল বাসা ওয়াশ ফি আনতাশ শাফী লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা শিফাআল লা ইউগাদিরু সুক্বমা।"

অর্থ: হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রতিপালক! আপনি কষ্ট দূর করে দিন এবং সুস্থতা দান করুন। কারণ আপনি একমাত্র রোগমুক্তিকারী। আপনার দ্বারা দেওয়া সুস্থতা সম্পূর্ণ আরোগ্য প্রদানকারী। আপনি এমনভাবে রোগ সেরে দিন যেন তা পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যায়।

জিব্রাইল (আ.) নবী (সা.)-কে যে দোয়া পড়েছিলেন ঝাড়ফুঁক করার জন্য, সেটিও পাঠ করা যেতে পারে।

بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ , مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنٍ أَوْ حَاسِدٍ , اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ

"বিসমিল্লাহি আরক্বীকা মিন কুল্লি শাইয়িন য়্যু’যীক অমিন শাররি কুল্লি নাফসিন আউ আইনি হা-সিদ, আল্লাহু য়্যাশফীক বিসমিল্লাহি আরক্বীক।"

অর্থ: আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি, সকল কষ্টদায়ক সমস্যার বিরুদ্ধে। প্রতিটি ক্ষতিকারক আত্মা এবং ঈর্ষাপরায়ণ চোখের অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে এই ঝাড়ফুঁক প্রদান করছি।

কালো জাদু থেকে বাচার জিকির 

কালো জাদু বা তন্ত্রমন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করার প্রচেষ্টা খুবই গুরুতর বিষয়। ইসলামের মধ্যে কালো জাদু বা যাদু প্রথার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। কালো জাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচার আমল এবং জিকিরের মাধ্যমে এই ক্ষতির প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার সুগম পদ্ধতি রয়েছে।

কালো জাদু থেকে বাঁচার জন্য ইসলামের বিভিন্ন শিক্ষা ও আমল রয়েছে। এ সকল আমল নিয়মিত পালন করলে কালো জাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচার সুযোগ পাওয়া যায়। ইসলামের শাসন অনুযায়ী, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ ও তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। এ জন্য প্রতিদিন সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পর কিছু বিশেষ জিকির এবং দোয়া পাঠ করা যায়।

"কালো জাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচার আমল" হিসেবে যে সকল জিকির এবং দোয়া রয়েছে তা হলো: সূরা ফালাক (113) এবং সূরা নাস (114) পড়া। এই দুইটি সূরা প্রতিদিন তিনবার করে পাঠ করলে কালো জাদুর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 

এছাড়া, "আউযুবি রাব্বি মিন কুল্লি শেয়তানিন ওয়াহাম্মা" বা "আমি প্রতিটি শয়তান ও বিরক্তি থেকে আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি" এই জিকিরটি বিশেষভাবে কালো জাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সহায়ক। এছাড়া, প্রতিদিন সকালে এবং রাতে "আয়াতুল কুরসি" (সূরা বাকারাহ, আয়াত 255) পাঠ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 

এটি কালো জাদু থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি কার্যকর উপায়। পরিশেষে, কালো জাদুর ক্ষতি থেকে বাঁচার আমল হিসেবে এটি নিশ্চিত করা জরুরি যে, আপনার ঈমান দৃঢ় এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখবেন। ইসলামী বিধি অনুযায়ী, নিয়মিত নামাজ আদায়, কুরআন তিলাওয়াত এবং সদাচরণ কালো জাদু থেকে বাঁচার উপায়। সুতরাং, এসব আমল করে আপনি নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।

সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত, যা আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত নিয়মিত পাঠ করা উচিত।

اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ- 

অর্থঃ "আল্লাহ ছাড়া কোন সত্যিকার উপাস্য নেই। তিনি অমর এবং সমস্ত সত্তার মালিক। তাঁর ওপর তন্দ্রা কিংবা নিদ্রার কোনো প্রভাব নেই। আসমান ও পৃথিবীর সবকিছু তাঁর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।" তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ তাঁর কাছে সুপারিশ করতে পারবে না। তিনি সমস্ত কিছুর অবস্থা জানেন আগে যা ছিল এবং যা পরে হবে। তাঁর জ্ঞান সীমাহীন; তার বাইরে কোনো কিছুই তাঁর জ্ঞানের আওতায় আসতে পারে না। তাঁর 'কুরসী' আকাশ ও পৃথিবীকে পুরোপুরি আবৃত করে রেখেছে এবং এই দুইয়ের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য কোনো বোঝা নয়। তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান।"

সূরা আরাফে যাদু সম্পর্কিত আয়াতগুলো হলো,

قَالَ إِنْ كُنْتَ جِئْتَ بِآيَةٍ فَأْتِ بِهَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ (106) فَأَلْقَى عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ ثُعْبَانٌ مُبِينٌ (107) وَنَزَعَ يَدَهُ فَإِذَا هِيَ بَيْضَاءُ لِلنَّاظِرِينَ (108) قَالَ الْمَلَأُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ إِنَّ هَذَا لَسَاحِرٌ عَلِيمٌ (109) يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَكُمْ مِنْ أَرْضِكُمْ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ (110) قَالُوا أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَأَرْسِلْ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ (111) يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (112) وَجَاءَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوا إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِنْ كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِينَ (113) قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ لَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ (114) قَالُوا يَا مُوسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ نَحْنُ الْمُلْقِينَ (115) قَالَ أَلْقُوا فَلَمَّا أَلْقَوْا سَحَرُوا أَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَاءُوا بِسِحْرٍ عَظِيمٍ (116) وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ (117) فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (118) فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ (119) وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ (120)قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ (121) رَبِّ مُوسَى وَهَارُونَ (122)

তিনি বললেন, "যদি তুমি কোনো নিদর্শন নিয়ে থাকো, তবে তা উপস্থাপন কর যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকো।" এরপর তিনি তার লাঠি ফেললেন এবং তা এক মুহূর্তের মধ্যে জীবন্ত এক অজগরে পরিণত হলো। এরপর তিনি তার হাত বের করলেন, যা সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের চোখে ঝলমল করে উঠল। ফেরাউনের অনুসারীরা বলল, "নিশ্চয় এই ব্যক্তি একজন দক্ষ যাদুকর। 

সে আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়। আপনারা কী মনে করেন?" তারা উত্তর দিল, "আপনি তাকে ও তার ভাইকে কিছুদিনের জন্য ছেড়ে দিন এবং শহরজুড়ে সংগঠক পাঠিয়ে দিন যাতে তারা প্রখ্যাত যাদুকরদের সংগ্রহ করতে পারে।" এরপর যাদুকররা আসল এবং ফেরাউনের কাছে উপস্থিত হলো। 

তারা প্রশ্ন করল, "যদি আমরা সফল হই, তাহলে কি আমাদের জন্য কিছু পুরস্কার বরাদ্দ থাকবে?" ফেরাউন উত্তর দিলেন, "হ্যাঁ, এবং তোমরা আমার নিকটবর্তী ব্যক্তিরূপে সম্মানিত হবে।" তারা মূসাকে বলল, "তুমি নিক্ষেপ করবে নাকি আমরা নিক্ষেপ করব?" মূসা বললেন, "তোমরাই নিক্ষেপ করো।" 

যখন তারা বান নিক্ষেপ করল, তখন মানুষের চোখগুলো যাদু দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে গেল, এবং মানুষ ভয়ভীতিতে পড়ে গেল। এরপর আমি মূসাকে ওহীর মাধ্যমে নির্দেশ দিলাম, "তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো।" ফলে, তা সবকিছু গিলে ফেলতে শুরু করল যা তারা যাদু দ্বারা বানিয়েছিল। 

এইভাবে সত্য উন্মোচিত হলো এবং তাদের সমস্ত কৃতকর্ম মিথ্যা প্রমাণিত হলো। তাই তারা পরাজিত হলো এবং লাঞ্ছিত হলো। শেষে, যাদুকররা সেজদায় পড়ে গিয়ে বলল, "আমরা ঈমান আনছি মহাবিশ্বের প্রতিপালকের প্রতি, যিনি মূসা ও হারুনের প্রতিপালক।"

লেখকের মন্তব্য

কালো জাদু একটি অদৃশ্য শক্তি ব্যবহার করে মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। এটি মানুষের বিশ্বাস ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। কালো জাদু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঈমান দৃঢ় রাখা ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা প্রয়োজন। 

নিয়মিত নির্দিষ্ট জিকির ও দোয়া পাঠ করা সাহায্য করতে পারে। ইসলামের শিক্ষা অনুসারে, কালো জাদুর প্রভাবকে মোকাবেলা করার জন্য সৎ ও ঈমানদার জীবনযাপন জরুরি। আজকের পোস্টটি আপনাদের উপকারে এসে থাকলে আপনার পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করবেন এবং পাশে থাকবেন ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url