মনের অশান্তি দূর করার দোয়া-মানসিক অশান্তি নিয়ে উক্তি
আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি যখন সারা বিশ্বজুড়ে মানসিক চাপের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে।মানসিক অশান্তি মোকাবিলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর এক্ষেত্রে মনের অশান্তি দূর করার দোয়া কিছুটা মানসিক প্রশান্তি আনতে পারে। এছাড়া, মানসিক অশান্তি নিয়ে উক্তি আমাদের চিন্তাভাবনাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যা মানসিক চাপকে মোকাবিলা করতে সহায়ক হয়।
একজন অভিভাবক হিসেবে, আপনার সন্তানের অতিরিক্ত চাপের লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা এবং কীভাবে সেগুলোর সমাধান করা যায় তা শেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে মনের অশান্তি দূর করার দোয়া এবং বিভিন্ন মানসিক অশান্তি নিয়ে উক্তি প্রেরণা জোগাতে পারে এবং সন্তানকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করবে।
ভূমিকা
মনের অশান্তি একটি সাধারণ সমস্যা যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। এটি বিভিন্ন কারণে উদ্ভূত হতে পারে, যেমন চাপ, উদ্বেগ বা ব্যক্তিগত সমস্যা। মনের অশান্তি মোকাবিলায় অনেকেই দোয়া এবং আমল অনুসরণ করে থাকেন। মনের অশান্তি দূর করার দোয়া এবং মানসিক অশান্তি নিয়ে উক্তি আমাদের মানসিক প্রশান্তি লাভে সাহায্য করতে পারে। আমাদের উচিত এই সমস্যার প্রতি সচেতন থাকা এবং কার্যকরী সমাধান গ্রহণ করা।
মানসিক অশান্তি
মানসিক অশান্তি হলো এক ধরনের মানসিক চাপ যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা কারণে সৃষ্টি হতে পারে। এটা আমাদের মনের স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করে, মনকে বিশ্রামহীন করে তোলে এবং অনেক ক্ষেত্রে দৈনন্দিন কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায়। মনের অশান্তি যখন দীর্ঘমেয়াদী হয় তখন তা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বড়দের মতো করে শিশুরা সবসময় মানসিক চাপ প্রকাশ করে না। যেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কাজ সম্পর্কিত চাপ বেশ সাধারণ, সেখানে বেশিরভাগ শিশু চাপ অনুভব করে যখন তারা কোনো হুমকি অনুভব করে বা কঠিন ও কষ্টকর পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে অসুবিধা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে, মনের অশান্তি দূর করার দোয়া কিছুটা মানসিক স্বস্তি এনে দিতে পারে। তাছাড়া, মানসিক অশান্তি নিয়ে উক্তি অনেক সময় চিন্তাধারাকে স্পষ্ট করতে এবং চাপ সামাল দিতে সাহায্য করতে পারে।
মনের অশান্তির কারণসমূহ
মানসিক অশান্তির প্রধান কিছু কারণ হলো ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত সমস্যা। যেমন:
- সম্পর্কের জটিলতা
- আর্থিক চাপ
- কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ
- জীবনে কোনো লক্ষ্য না থাকা
- নানান শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা
এসব কারণে মনের অশান্তি সৃষ্টি হয় যা আমাদের মনের শান্তি নষ্ট করে দেয়।
মনের অশান্তির লক্ষণ
মানসিক অশান্তি বিভিন্ন উপায়ে প্রকাশ পায়। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো,
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ
- নিদ্রাহীনতা
- মানসিক চাপ
- ক্রোধ ও হতাশা
মনোযোগের অভাব এগুলো মনের অশান্তির লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় এবং এগুলো আমাদের জীবনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
আরও পড়ুনঃ ধন সম্পদ এবং রিজিক বৃদ্ধির দোয়া।
মনের অশান্তি দূর করার ২৩টি উপায়
- ধ্যান ও যোগব্যায়াম: ধ্যান এবং যোগব্যায়াম মনের প্রশান্তি আনার একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি। নিয়মিত যোগব্যায়াম এবং ধ্যানের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ক শান্ত হয় এবং মনের অশান্তি কমে আসে। এর ফলে মানসিক চাপ কমে এবং মনকে শান্ত রাখা সহজ হয়।
- নেতিবাচক চিন্তা থেকে বিরতঃ যখনই মনের অশান্তিতে ভুগবেন, তখন সব ধরণের নেতিবাচক বা অপ্রয়োজনীয় চিন্তা থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করুন। মনকে ভালো এবং ইতিবাচক চিন্তার দিকে ধাবিত করুন, এমন কিছু ভাবুন যা আপনাকে মানসিকভাবে শান্তি এনে দেবে। এতে করে দেখবেন, আপনার মানসিক অশান্তি দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
- সঠিক খাদ্যাভ্যাস: সঠিক খাদ্যাভ্যাস মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন ফল, শাকসবজি এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে মানসিক অশান্তি কমে যায়। পানির চাহিদা পূরণ করা এবং নিয়মিত খাবার গ্রহণ করা মানসিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- বাইরে থেকে ঘুরে আসাঃ যখনই মানসিক অস্থিরতা অনুভব করবেন, প্রথমে দ্রুত বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করুন। একা একা ঘরের মধ্যে চুপচাপ বসে থাকলে বা নিজেকে বদ্ধ পরিবেশে আটকে রাখলে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে। তাই যদি মন খারাপ লাগে বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, একবার বাইরে ঘুরে আসুন। এতে করে আপনার মনের অশান্তি অনেকটাই কমে আসবে।
- আত্মবিশ্বাস বাড়ানো: নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা এবং ইতিবাচক চিন্তা করা মানসিক অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি উপায়। আত্মবিশ্বাসী মানুষ অনেক বেশি দৃঢ়তার সঙ্গে সমস্যার মোকাবিলা করতে পারে। এক্ষেত্রে "মানসিক অশান্তি নিয়ে উক্তি" আমাদের অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে।
- পরিকল্পনা তৈরি করাঃ কোনো ব্যাপারে অতিরিক্ত চিন্তা করলেও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, দুশ্চিন্তা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যে সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আপনি শান্তি খুঁজে পান না। এমন অবস্থায় আপনার করণীয় হবে চিন্তার কারণগুলো বিশ্লেষণ করা এবং ইতিবাচক-নেতিবাচক উভয় দিক বিবেচনা করে মানসিকভাবে একটি পরিকল্পনা তৈরি করা। এভাবে আপনি মনের অশান্তি কমাতে সক্ষম হবেন।
- মনের অশান্তি দূর করার দোয়া: মানসিক শান্তি আনার জন্য প্রার্থনার গুরুত্ব অসীম। মনের অশান্তি দূর করার দোয়া পড়া বা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া মনের ভার লাঘব করতে পারে। এটি আমাদের মনের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- ভালোভাবে ঘুমানো নিশ্চিত করাঃ কোনো কিছু থেকে মুক্তি পেতে ঘুমের মতো কার্যকর কিছু নেই। আপনার মানসিক অস্থিরতা দূর করতেও এটি অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে। যখনই আপনি অস্থিরতায় ভুগতে শুরু করবেন, তখন একবার ভালোভাবে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। যদি একটি লম্বা ঘুম দিতে পারেন, দেখবেন মনের অশান্তি আর আপনাকে তেমন বিরক্ত করবে না।
- বন্ধু ও পরিবারের সাথে সময় কাটানো: প্রিয়জনদের সাথে কথা বলা এবং তাদের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক অশান্তি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। সামাজিক সম্পর্কগুলো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং মনের প্রশান্তি আনে।
- ঠাণ্ডা পানি পান করুনঃ মানসিক অস্থিরতা কমানোর জন্য প্রথমেই একগ্লাস ঠাণ্ডা পানি পান করুন। এই সামান্য কাজটি আপনাকে অবাক করার মতো মানসিক শান্তি এনে দিতে পারে। মনের অশান্তি দূর করতে একগ্লাস ঠাণ্ডা পানি অনেকটা সহায়ক হতে পারে।
- পেশাদার সহায়তা নেওয়া: যখন মনের অশান্তি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন পেশাদার মনোবিদ বা থেরাপিস্টের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। মানসিক অশান্তি দূর করতে থেরাপি বা পরামর্শদানের কার্যকারিতা প্রমাণিত।
- গান শোনা বা গল্পের বই বা কবিতা পড়াঃ যদিও ইচ্ছা না থাকে, তবুও গান শোনা, গল্পের বই বা কবিতা পড়া কিংবা বাগানে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর মতো আপনার পছন্দের কাজগুলো করুন। এই ধরনের কাজ আপনার মনকে অন্য দিকে নিয়ে গিয়ে অস্থিরতা কমাতে সহায়ক হবে। এভাবে মনের অশান্তি ধীরে ধীরে দূর হতে পারে।
- ইতিবাচক চিন্তা ও মনের প্রশান্তি: সাধারণত, মানসিক অশান্তি নিয়ে উক্তি পড়ে বা অন্যের অভিজ্ঞতা শুনে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি এবং জীবনকে ইতিবাচকভাবে দেখতে শিখি। এ ধরনের উক্তি মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- সুখস্মৃতি স্মরণ করুনঃ মনের অস্থিরতা কমাতে অতীতের কিছু সুখস্মৃতি স্মরণ করুন অর্থাৎ আপনার জীবনের ভালো সময়গুলো নিয়ে ভাবুন। এতে করে মনের অজান্তেই আপনার মুখে হাসি ফুটে উঠবে এবং মানসিক অশান্তি অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
- অস্থিরতাকে গুরুত্ব না দেওয়াঃ অস্থিরতাকে গুরুত্ব না দেওয়ার চেষ্টা করুন। নিজেকে বিশ্বাস করান যে, এমনটা আপনার সঙ্গে কখনও হয়নি আপনি যেন ঘুমের মধ্যে আছেন এবং এই অনুভূতিটা খুব শিগগিরই কেটে যাবে। এভাবে মনের অশান্তি ধীরে ধীরে কমে আসবে।
- উল্টো দিক থেকে সংখ্যা গুনাঃ উল্টো দিক থেকে সংখ্যা গুনতে শুরু করুন, যেমন ১০০, ৯৯, ৯৮ এভাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতি মানসিক উত্তেজনা কমাতে বেশ কার্যকর। মনের অশান্তি দূর করতে আপনিও এই প্রক্রিয়াটি অবলম্বন করতে পারেন।
- নির্ভুল হওয়ার চিন্তা ত্যাগ করুনঃ সাধারণত যারা টাইপ 'এ' ব্যক্তিত্বের অধিকারী, অর্থাৎ সবসময় নিখুঁত হতে চান, তাদেরই হৃদরোগে ভোগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অধ্যাপক হেফনারের মতে, এই অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে মনোভাব শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিত্বে শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব গড়ে তোলে। তিনি বলেন, টাইপ 'এ' চরিত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা শত্রুতার মনোভাবই মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে যা অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবই উচ্চ রক্তচাপ এবং পরবর্তীতে হৃদরোগের কারণ হয়। তাই মনের অশান্তি দূর করতে সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করুন এবং সবার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করুন।
- সবার সাথে ব্যস্ত থাকাঃ যদি মানসিক অস্থিরতা অনুভব করার পর সবার থেকে নিজেকে আলাদা করে একা বসে সেই বিষয় নিয়ে ভাবতে থাকেন, তাহলে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে। তাই এমন পরিস্থিতিতে তা ত্যাগ করুন। উঠে গিয়ে মুখ-হাত ধুয়ে নিন। ঘরে থাকলে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, অফিসে থাকলে কলিগদের সঙ্গে কথা বলুন। সুযোগ থাকলে বাইরে বেরিয়ে একটু ঘুরে আসুন, সিনেমা বা নাটক দেখুন, পছন্দের খাবার খান কিংবা শপিংয়ে যান। এভাবে মনের অশান্তি কমিয়ে ফেলতে পারবেন।
- বাস্তববাদী হওয়াঃ অনেকেই ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে তা নিয়ে অযথা উৎকণ্ঠিত ও চিন্তিত হন। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি, জীবনে কিছু সমস্যা থাকবেই এবং কখনো কখনো এমন ঘটনাও ঘটতে পারে যা আমরা এড়াতে চাই। তবে সব সমস্যারই সমাধান আছে এবং সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। তাই বাস্তবতাকে গ্রহণ করে মানিয়ে চলার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। এতে করে টেনশন কমে আসবে। পাশাপাশি, তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে অতিরিক্ত আবেগী হওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে, যাতে মনের অশান্তি কমে যায়।
- সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করাঃ অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে চিন্তা করা থেকেই মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে সেই সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। প্রথমে অস্থিরতার মূল কারণ খুঁজে বের করুন এবং তা সমাধানের চেষ্টা করুন। অস্থিরতার কারণগুলো থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করুন, এতে মনের অশান্তি ধীরে ধীরে কমে আসবে।
- তালিকা তৈরি করুনঃ অনেক সময় মনে হয়, আপনি অগণিত সমস্যায় জর্জরিত। এ ক্ষেত্রে, দুশ্চিন্তার কারণগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন। দেখবেন, কয়েকটি কারণ লেখার পর আর তেমন কিছু খুঁজে পাবেন না। তালিকায় এমন কিছু সমস্যা থাকবে যা কমবেশি সবার জীবনে থাকে। এতে আপনি বুঝতে পারবেন যে, দুশ্চিন্তার তেমন বড় কোনো কারণ নেই। এভাবে আপনার মানসিক অশান্তি কমবে এবং আপনি ধীরে ধীরে মানসিক শান্তি খুঁজে পাবেন।
- ক্যাফেইন গ্রহণ কমিয়ে দিনঃ কারণ এটি দ্রুত আপনার ইন্দ্রিয়কে সজাগ করে তোলে এবং মানসিক চাপ বাড়ায়। এই প্রভাব তখনই সহায়ক হতে পারে যদি আপনি কোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। তবে, ঘন ঘন চা বা কফি পান করার অভ্যাস পরিহার করুন, কারণ এগুলোতে প্রচুর ক্যাফেইন থাকে। এমনকি জিরো-ক্যালরি বা চিনিহীন বলে পরিচিত কোমল পানীয় থেকেও দূরে থাকুন, যাতে মনের অশান্তি এড়ানো যায়।
- ডায়েরি লিখুনঃ যদি আপনি কখনো ডায়েরি না লেখেন, তবে চেষ্টা করুন সেই বিষয়টি ডায়রিতে লিখে ফেলতে। যা কিছু আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে বা মানসিক চাপের কারণ হচ্ছে, সেগুলো লেখুন। এছাড়াও, আপনি কী চান বা কী করলে আপনার ভালো লাগবে, সেগুলোও উল্লেখ করুন। ডায়েরি লেখার এই অভ্যাসটি মানসিক অশান্তি কমাতে সহায়ক হবে এবং আপনাকে শান্তি প্রদান করতে পারে।
সংসারে অশান্তি দূর করার উপায়
সংসারে অশান্তি দূর করার দোয়া
ইয়া আল্লাহ, আমাকে ও আমার পরিবারকে শান্তি দান করুন
সূরা আল-বাকারার শেষ দুটি আয়াত (২৮৫-২৮৬)
ঘরে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া
সূরা তাওবা, আয়াত ৫১
পরিবারে সালামের প্রচলন করা
মনের অশান্তি দূর করার সূরা
মনের অশান্তি দূর করার জন্য ইসলামে বিভিন্ন সূরা ও দোয়া রয়েছে, যেগুলো নিয়মিত পাঠ করলে অন্তরের প্রশান্তি ফিরে আসে। বিশেষ করে, মনের অশান্তি দূর করার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট সূরা রয়েছে, যেগুলোর ফজিলত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক অস্থিরতা এমন একটি সমস্যার নাম, যা কোনো কাজেই মন বসতে দেয় না এমনকি নামাজ, রোজা ও ইবাদতেও ব্যাঘাত ঘটায়। এই ধরনের মানসিক অশান্তি থাকলে সবকিছুতেই অস্থিরতা অনুভূত হয়। মনের অশান্তি দূর করার জন্য ইসলামিক নির্দেশনা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
মনের অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে ইসলামে অনেক কার্যকর আমল ও দোয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নিয়মিত এসব আমল করলে মানসিক অশান্তি কমে যায় এবং জীবন সহজ হয়ে ওঠে। দোয়া ও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা মনের অশান্তি দূর করার প্রধান উপায়।
ইসলামের নির্দেশনা মেনে চললে মনের শান্তি ফিরে আসে এবং মানসিক অশান্তি ধীরে ধীরে দূর হয়। মনের অশান্তি থাকলে ধৈর্য ধরে আল্লাহর উপর ভরসা করা উচিত এবং নিয়মিত ইবাদতের মাধ্যমে মানসিক অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সূরা আল-ইনশিরাহ (আলম নাশরাহ)
এই সূরা মনের অশান্তি দূর করার জন্য অত্যন্ত উপকারী। আল্লাহ এখানে বলেছেন, কষ্টের পরই শান্তি আসে এবং কঠিন সময় পেরিয়ে সহজ সময় আসে। এই সূরাটি নিয়মিত পাঠ করলে মনের অশান্তি কমে এবং জীবনকে সহজ মনে হয়। যারা মানসিক চাপ ও উদ্বেগে ভোগেন, তাদের জন্য এটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। মনের অশান্তি দূর করার দোয়া হিসেবে এই সূরা অত্যন্ত কার্যকর।
আল্লাহর জিকির করা
জিকির করলে মনের অশান্তি দূর হয় এবং অন্তরে প্রশান্তি আসে। কারণ, মুমিন মুসলমানের অন্তরের প্রকৃত খোরাক হলো জিকির, ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া-মোনাজাত। মহান আল্লাহ তাআলা কোরআনে এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন,
"যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহকে স্মরণ করে, তাদের অন্তর শান্তি লাভ করে। মনে রাখো, মানুষের অন্তর শুধুমাত্র আল্লাহর স্মরণেই প্রকৃত প্রশান্তি পায়।" (সুরা রাদ : আয়াত ২৮)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহর জিকির করার মাধ্যমে মনের অশান্তি কমে যায় এবং মানসিক অশান্তি দূর হয়। মনের অশান্তি এবং মানসিক অশান্তি কাটিয়ে অন্তরে শান্তি ও প্রশান্তি আসতে সাহায্য করে আল্লাহর স্মরণ।
সূরা ফালাক ও সূরা নাস
মনের অশান্তি ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই দুটি সূরার গুরুত্ব অপরিসীম। এগুলো শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা করে এবং মানসিক শান্তি ফিরিয়ে আনে। নিয়মিত এই সূরা দুটি পাঠ করলে আল্লাহর আশ্রয়ে মনের অশান্তি দূর হয়।
কোরআন তেলাওয়াত করা
কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মানুষের মনের অশান্তি দূর হয় এবং মানসিক অশান্তি কমে আসে। কোরআন তেলাওয়াতের ফলে অন্তরে এক শান্তিপূর্ণ জান্নাতি আবহ তৈরি হয়। এটি মানুষের জন্য শুধুমাত্র মানসিক অশান্তি দূর করার জন্য নয়, বরং অনেক ধরনের রোগের সুচিকিৎসা এবং আল্লাহর রহমত হিসেবে বিবেচিত। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন,
"আমরা কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করেছি যা রোগের চিকিৎসা এবং মুমিনদের জন্য রহমত হিসেবে কাজ করে। তবে পাপীদের জন্য এটি কেবল ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।"(সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮২)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, কোরআন তেলাওয়াত মানুষের মনের অশান্তি এবং মানসিক অশান্তি কমাতে সহায়ক। এটি রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি, অন্তরের শান্তি ও প্রশান্তি নিশ্চিত করে।
সূরা ইউসুফ
এই সূরাটি জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ও সাহস ধরে রাখার জন্য উপকারী। সূরা ইউসুফে নবী ইউসুফ (আ.)-এর জীবনের কষ্ট ও পরে প্রাপ্তি বর্ণিত হয়েছে। এটি আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধরলে সব অশান্তি কেটে যায় এবং শান্তি আসে। ইসলামের আলোকে মনের অশান্তি দূর করার জন্য দোয়া এবং সূরা পাঠ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক সময় মানসিক অশান্তি নিয়ে উক্তি দেওয়া হলেও, প্রকৃত সমাধান হলো আল্লাহর পথে ফিরে আসা এবং কোরআনের সূরা ও দোয়া পাঠ করা। মানসিক অশান্তি নিয়ে উক্তি থাকলেও প্রকৃত শান্তি আসে আল্লাহর দয়া ও ক্ষমার মাধ্যমে যা নিয়মিত কোরআন পাঠ ও দোয়ার মাধ্যমেই অর্জন সম্ভব।
উল্লিখিত আমলগুলির পাশাপাশি, মনের অস্থিরতা দূর করার জন্য বেশ কিছু দোয়া রয়েছে। হাদিসে পাকে এই দোয়াগুলো অস্থিরতা ও উদ্বিগ্ন ব্যক্তিদের জন্য উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এসব দোয়া নিয়মিত পাঠ করতেন।
'আল্লাহুম্মা রাহমাতাকা আরঝু, ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি ত্বারফাতা আইনিন, ওয়া আসলিহ লি শানি কুল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহ আনতা।’
অর্থঃ "হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে মনের শান্তি প্রার্থনা করছি। আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমার নিজের ওপর নির্ভর করতে দিও না। বরং তুমি নিজে আমার সমস্ত বিষয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করো। তুমি ছাড়া মনের অস্থিরতা ও বিপদ থেকে রক্ষা করার মতো কোনো ইলাহ নেই।" (আদাবুল মুফরাদ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আজিমুল হালিম; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজিম; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আ’রশিল কারিম।’
অর্থঃ "আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই; তিনি অতি মহান ও সহনশীল। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই; তিনি বিশাল আরশের মালিক। আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মাবুদ নেই; তিনি আসমান ও জমিনের এবং মহান আরশের অধিপতি।" (বুখারি)
'আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল আঝযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালাইদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’
অর্থঃ "হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি চিন্তা-ভাবনা, অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা এবং কাপুরুষতা থেকে। তাছাড়া, অতিরিক্ত ঋণ ও দুষ্ট লোকদের প্রাধান্য থেকেও আমি আপনার আশ্রয় চাই।"
‘আল্লাহু আল্লাহু রাব্বি, লা উশরিকু বিহি শাইআ।’
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রভু, আল্লাহ। আমি তোমার সঙ্গে কোনো শরিক মেনে নিই না।’ (আবু দাউদ)
মানসিক অশান্তি নিয়ে উক্তি
মানসিক চাপ বা মানসিক তন্দ্রা হলো মানবদেহের মন ও শরীরের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা বা অস্বস্তির অবস্থা, যা মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার একটি সাধারণ প্রতীক হতে পারে। এটি সাধারণত জীবনযাত্রা, কাজ, চিন্তা এবং আন্তরিক সম্পর্কের ফলস্বরূপ উদ্ভূত হতে পারে।
মনের অশান্তি ও মানসিক অশান্তির ফলে জীবনের পরিবর্তন করা কঠিন হয়ে পড়ে। মানসিক অশান্তি এবং মনের অশান্তি মোকাবেলার জন্য বিখ্যাত ব্যক্তিরা কিছু বিশেষ ও শিক্ষাপ্রদ উক্তি রেখে গেছেন। এখানে তাদের কিছু উক্তি তুলে ধরা হলো যা মানসিক চাপ ও অশান্তি সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
- চ্যাম্পিয়নরা জিমে তৈরি হয় না। চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে যা গভীরভাবে থাকে, যেমন একটি দৃঢ় মানসিক শক্তি, একটি ইচ্ছা, একটি স্বপ্ন এবং একটি দৃষ্টি—এই গুণাবলীর মাধ্যমে তারা সফল হয়। মনের অশান্তি বা মানসিক অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে এই অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মোহাম্মদ আলী
- যদি আপনি জানেন যে আপনার দৃঢ় মানসিক শক্তি রয়েছে, তাহলে এটি সত্যিই একটি চমৎকার অর্জন। এটি আপনাকে আত্মবিশ্বাস প্রদান করে, যা আপনাকে বিশ্বাস করায় যে আপনি সবকিছু করতে সক্ষম। মনের অশান্তি ও মানসিক অশান্তি দূর করতে এই আত্মবিশ্বাস আপনাকে সাহায্য করতে পারে এবং আপনার দ্বারা কিছু করার সম্ভাবনা উজ্জীবিত হয়। নিকোলাস বার্ন্স
- একাগ্রতা ও মানসিক শক্তি হলো বিজয় অর্জনের মূল চাবিকাঠি। মনের অশান্তি ও মানসিক অশান্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য এই একাগ্রতা এবং শক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিল রাসেল
- সাফল্য ধরে রাখতে মেধার তুলনায় মানসিক শক্তি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে একটি ম্যারাথন রানার হওয়ার মতো মানসিক শক্তি অর্জন করতে হবে, যা মনের অশান্তি ও মানসিক অশান্তি মোকাবেলায় সহায়ক হবে। জোয়ান রিভারস্
- আমি স্পষ্টভাবে এখন আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী। এটা শারীরিক শক্তির বিষয় নয়, বরং প্রতিকূল পরিবেশ আমাকে শেখায় কিভাবে মনের অশান্তি ও মানসিক অশান্তি মোকাবিলা করতে হয়। এখন আমার মানসিক শক্তি আগের চেয়ে অনেক বেশি, যা আমাকে ব্যক্তি হিসেবে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। গ্যারিট কোলে
- নিজের মানসিক শক্তির ওপর ভরসা রাখতে শিখুন। খেলাধুলার জগতে দক্ষতা অর্জন কিছু মৌলিক বিষয় শেখার ব্যাপার, যা তুলনামূলকভাবে দ্রুত শেখা যায়। তবে, কিংবদন্তি হয়ে ওঠা অনেক কঠিন কারণ মনের অশান্তি ও মানসিক অশান্তি মোকাবেলায় প্রত্যেকের কাছে যথেষ্ট মানসিক শক্তি থাকে না। রবার্তো কার্লোস
- যদি আপনি কেবল কোনো কিছুর প্রতি অন্ধবিশ্বাস রেখে বসে থাকেন, তাহলে কখনোই সাফল্য আসবে না। আপনাকে মাঠে নামতে হবে, লড়াই করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে এবং দৃঢ় মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। তবেই আপনি সফলতার দেখা পাবেন। ক্রিস্টোফার ইভান্স
- জীবনে যতই মানসিক অশান্তি আসুক, ধৈর্য ধারণ করা প্রয়োজন। কারণ, কেউ জানে না কখন কার জীবনে সুখের আগমন ঘটবে, আর মনের অশান্তি ও মানসিক অশান্তি সহ্য করার মাধ্যমেই সেই সুখ আসবে।
- আমাদের জীবনকে মানসিক অশান্তি মোকাবেলা করে অতিক্রম করতে হবে, কারণ মনের অশান্তি ও মানসিক অশান্তি থেকে মুক্তির কোনো সহজ রাস্তা নেই।
- যে ব্যক্তি যত বেশি মানসিক অশান্তির সম্মুখীন হয়, সে তত বেশি দক্ষতা অর্জন করে এবং বাস্তববাদী হয়ে ওঠে।
- ছোটবেলা থেকে যারা মানসিক অশান্তি নিয়ে বড় হয়, তারা পরবর্তীতে জীবনে সুখী হতে পারে না।
- মানসিক অশান্তি মুক্ত কোনো পরিবার নেই, প্রায় সব ঘরেই কিছুটা মনের অশান্তি থাকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url