পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও ঘরোয়া চিকিৎসা
বর্তমানে বাংলাদেশে পাইলস এমন একটি রোগ যা সব বয়সের নারী ও পুরুষের মধ্যে দেখা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ ও পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও ঘরোয়া চিকিৎসা অনুসরণ করলে এই রোগ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে যদি সময়মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে এবং তখন অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
অনেক মানুষ পাইলস সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগে থাকেন এবং এর ফলে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এ কারণেই সকলকে পরামর্শ দেওয়া হয় এই রোগ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বের করার জন্য কিন্তু অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না কী করণীয়। তাই আজকের আলোচনা পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও ঘরোয়া চিকিৎসা জানতে দ্রুত মূল আলোচনায় চলে যান।
ভূমিকা
পাইলস হলো মলদ্বারের একটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা যা শিরাগুলোর অস্বাভাবিক ফুলে ওঠার ফলে সৃষ্টি হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যেকোনো বয়সের মানুষের এ রোগটি হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য, অতিরিক্ত ওজন এবং দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার মতো অভ্যাস পাইলসের ঝুঁকি বাড়ায়। পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও ঘরোয়া চিকিৎসা গ্রহণ করলে এ সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঠিক সময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিলে অপারেশন ছাড়া এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
হেমোরয়েড বা পাইলসের কারণ ও লক্ষণ
পাইলসের কারণ
- কোষ্ঠকাঠিন্য: দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য পাইলসের অন্যতম প্রধান কারণ। মলত্যাগ করার সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের কারণে মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে ওঠে।
- দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা: অফিস বা অন্য কাজের জন্য দীর্ঘ সময় বসে থাকলে মলদ্বারের শিরাগুলোর ওপর চাপ পড়ে যা হেমোরয়েড বা পাইলস এর দিকে ধাবিত করে।
- অতিরিক্ত ওজন: স্থূলতা মলদ্বারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে যা পাইলসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের পাশাপাশি জরায়ুর চাপ শিরাগুলোর ওপর প্রভাব ফেলে যা পাইলসের কারণ হতে পারে।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফাইবারের অভাব, বেশি মশলাযুক্ত খাবার এবং কম পানি পান করার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় যা পাইলসের কারণ হতে পারে।
- অনিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে হজমের প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায় এবং মল কঠিন হয়ে যায় যা পাইলসের সৃষ্টি করে।
- লিভারের সমস্যা: লিভারের কিছু সমস্যা যেমন সিরোসিস বা অন্য কোনো রোগ মলদ্বারে শিরাগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে যা পাইলসের কারণ হতে পারে।
- হেরিডিটারি বা বংশগত প্রভাব: পরিবারের কারও হেমোরয়েড বা পাইলস থাকলে জিনগত কারণে তা আপনারও হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
- দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা: দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকাও মলদ্বারের শিরাগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে যা পাইলসের কারণ হতে পারে।
- আঁটসাঁট পোশাক: আঁটসাঁট পোশাক পরার ফলে মলদ্বারের অংশে রক্ত সঞ্চালন ঠিকভাবে না হওয়ায় পাইলস হতে পারে।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল: ধূমপান ও অ্যালকোহল শরীরের হজম প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় এবং পাইলস হতে পারে।
- চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতা: কিছু চিকিৎসা পদ্ধতির ফলে শিরাগুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে যা পাইলসের কারণ হতে পারে।
- বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে মলদ্বারের শিরাগুলো দুর্বল হয়ে যায়, ফলে হেমোরয়েড বা পাইলস হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপও হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, যা পাইলসের কারণ হতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া: দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া মলদ্বারের শিরাগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে যা পাইলসের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
পাইলসের লক্ষণ
- মলদ্বারে ব্যথা: পাইলসের কারণে মলদ্বারে তীব্র ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভূত হয়, বিশেষত মলত্যাগের সময়।
- রক্তপাত: মলদ্বার থেকে রক্তপাত হওয়া পাইলসের অন্যতম সাধারণ লক্ষণ। এটি অভ্যন্তরীণ পাইলসের সময় বেশি দেখা যায়।
- শিরাগুলো ফুলে ওঠা: মলদ্বারের চারপাশে শিরাগুলো ফুলে ওঠে এবং ব্যথাযুক্ত হয়ে পড়ে, যা বাহ্যিক পাইলসের লক্ষণ।
- চুলকানি ও জ্বালা: মলদ্বারের চারপাশে তীব্র চুলকানি এবং জ্বালা পাইলসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
- মলদ্বারে মাংসপিণ্ড: কিছু ক্ষেত্রে মলদ্বারের আশেপাশে শিরাগুলো বড় মাংসপিণ্ডের আকারে দেখা দেয়, যা অসুবিধাজনক হয়ে ওঠে।
পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয়
পাইলস হলে সমস্যা দেখা দেয়ার বেশ কিছু দিক রয়েছে যা জীবনযাত্রার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। পাইলস বা হেমোরয়েডস মূলত মলদ্বার বা রেক্টামের শিরাগুলোর স্ফীতি যা অস্বস্তি এবং ব্যথার কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত দুটি ধরনের হয় বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ।
মল ত্যাগে ব্যথা ও কষ্ট
পাইলস হলে মল ত্যাগের সময় তীব্র ব্যথা ও কষ্ট হয়। মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে যাওয়ার ফলে মলত্যাগে বাধা সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় মল শক্ত হলে ব্যথা আরও বেড়ে যায় এবং মল ত্যাগের সময় রক্তপাতও হতে পারে।
রক্তপাত
পাইলস হলে সমস্যা দেখা দেয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো রক্তপাত। মল ত্যাগের সময় মলদ্বার থেকে তাজা লাল রক্তপাত হতে পারে যা অনেকের জন্য আতঙ্কজনক হতে পারে। এই রক্তপাত সাধারণত অভ্যন্তরীণ পাইলসের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।
চুলকানি ও জ্বালা
মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি ও জ্বালা অনুভূত হওয়া পাইলসের আরেকটি সাধারণ সমস্যা। বাহ্যিক পাইলস হলে শিরার ফোলাভাবের কারণে এই ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয় যা দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।
ফোলাভাব ও গুটি
বাহ্যিক পাইলসের ক্ষেত্রে মলদ্বারের আশেপাশে গুটি বা ফোলাভাব অনুভূত হয়। এই গুটিগুলো স্পর্শে ব্যথাযুক্ত হতে পারে এবং কখনও কখনও এই ফোলাভাব থেকে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি থাকে যা আরও জটিলতা সৃষ্টি করে।
মলদ্বার থেকে মিউকাস নির্গত হওয়া
পাইলসের ফলে মলদ্বার থেকে মিউকাস নির্গত হতে পারে যা অতিরিক্ত অস্বস্তি এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। এই মিউকাস সংক্রমণের কারণে মলদ্বার অঞ্চলে প্রদাহ এবং ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
সংক্রমণ
যদি পাইলস দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সংক্রমণের ফলে মলদ্বারে তীব্র ব্যথা, ফোলাভাব এবং পুঁজ নির্গত হতে পারে যা চিকিৎসা ছাড়া নিরাময় হয় না।
মলদ্বারের টিস্যুর ক্ষতি
পাইলসের কারণে মলদ্বারের টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বিশেষত যদি শিরাগুলো ফেটে যায় বা থ্রম্বোসিস তৈরি হয়। টিস্যুর এই ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
পাইলস এর ফোলা কমানো এবং চিরতরে মুক্তির উপায়
গরম পানির সিটজ বাথ
বরফ প্রয়োগ
ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ
পর্যাপ্ত পানি পান
অ্যালোভেরা জেল
টয়লেটের সময়ে চাপ না দেয়া
ব্যথানাশক ওষুধ
মল নরম করার ওষুধ (Stool Softeners)
বিশ্রাম ও শারীরিক কার্যকলাপ
পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
পর্যাপ্ত পানি পান
সিটজ বাথ (গরম পানির স্নান)
অ্যালোভেরা জেল
বরফ প্রয়োগ
নারকেল তেল
টয়লেটের সময় চাপ না দেয়া
লেবুর রস
লেখকের মন্তব্য
পাইলস থেকে স্থায়ী মুক্তি পেতে সার্জারি বা চিকিৎসা ছাড়াই পাইলস থেকে মুক্তি উপরোক্ত আলোচনা থেকে পদ্ধতিগুলো মেনে চলতে পারেন। এভাবে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় খুঁজে পেতে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও ঘরোয়া চিকিৎসা জানতে আমার এই পোস্টটি আপনাকে কতটুকু সাহায্য করল তা কমেন্ট করে জানাবেন, ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url