এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
আসন্ন প্রচণ্ড গরমে এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা নিয়ে আজকের আলোচনায় বিস্তারিত বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে জানতে পুরো আলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে এসির বিকল্প পাওয়া কঠিন কিন্তু এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা জানতে দ্রুত মূল আলোচনায় চলে জান।
এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
১. রুমের আকার অনুযায়ী এসির টন নির্ধারণ
এসি কেনার আগে সঠিক টন বা ক্ষমতা নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভুল ক্ষমতার এসি নিলে কুলিং কম হতে পারে বা বিদ্যুৎ বিল বেশি আসতে পারে। এসির “টন” (Ton) বলতে বোঝায় এসির শীতল করার ক্ষমতা। সাধারণত, ১ টন এসি প্রতি ঘণ্টায় ১২,০০০ BTU (British Thermal Unit) তাপমাত্রা শোষণ করতে পারে।
নিচে একটি সাধারণ গাইডলাইন দেওয়া হলো, যেটি অনুসরণ করে আপনি আপনার রুমের জন্য সঠিক এসি বেছে নিতে পারেন,
শুধু রুমের আকারই নয়, আরও কিছু বিষয় এসির ক্ষমতা নির্ধারণে প্রভাব ফেলে,
- যদি রুমে বেশি জানালা বা দরজা থাকে, তাহলে গরম বাতাস ঢুকতে পারে এবং বেশি টনের এসি লাগতে পারে।
- যদি রুমে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে, তাহলে অতিরিক্ত গরম হতে পারে। ফলে ১ টন এসির পরিবর্তে ১.৫ টন প্রয়োজন হতে পারে।
- প্রতি ব্যক্তি থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। যদি রুমে বেশি মানুষ থাকে, তাহলে এসির টন বাড়ানো দরকার।
- যদি রুমে টিভি, কম্পিউটার, ফ্রিজ বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস থাকে, তাহলে এগুলো থেকে তাপ উৎপন্ন হয়, যা এসির লোড বাড়াতে পারে।
- যদি আপনার রুমটি বাড়ির শীর্ষ তলায় হয়, তবে সেখানে বেশি গরম হয়। ফলে একটু বেশি টনের এসি লাগতে পারে।
২. বাজেট ঠিক করুন
এসি কেনার সময় শুধু ব্র্যান্ড বা ফিচার নয়, বাজেট ঠিক করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। কারণ এসি কেনার পর শুধু একবারের খরচ নয়, এটি দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ বিল ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচের ওপরও প্রভাব ফেলে। তাই সঠিক পরিকল্পনা করা জরুরি।
এসি কেনার সময় আপনার বাজেটের মধ্যে সেরা ফিচার খুঁজতে হবে। সাধারণত এসির দাম নির্ভর করে,
✅ ব্র্যান্ড: ভালো ব্র্যান্ডের এসি তুলনামূলক বেশি টেকসই হয় এবং ভালো ওয়ারেন্টি দেয়।
✅ ধরন: ইনভার্টার এসি সাধারণ এসির চেয়ে একটু বেশি দামি তবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
✅ ক্যাপাসিটি (টন): ১.৫ বা ২.০ টন এসির দাম ১.০ টনের চেয়ে বেশি হবে।
✅ এনার্জি রেটিং: বেশি স্টার রেটিং (৪★ বা ৫★) মানে বিদ্যুৎ খরচ কম, তবে দাম বেশি।
✅ অতিরিক্ত ফিচার: স্মার্ট প্রযুক্তি, ওয়াইফাই, ন্যানো ফিল্টার ইত্যাদি থাকলে দাম বেশি হবে।
শুধু এসির দামই নয়, মাসিক বিদ্যুৎ বিল কেমন আসবে, সেটিও বাজেটের অংশ হওয়া উচিত।
এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার এসির পার্থক্য বোঝা। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে জানতে হবে কোনটি আপনার প্রয়োজন ও বাজেটের সাথে বেশি মানানসই হবে।
ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার এসি কী?
✅ ইনভার্টার এসি: এটি এমন একটি এসি প্রযুক্তি যা বিদ্যুতের ব্যবহার কমায়, কম্প্রেসারের গতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ঘরের তাপমাত্রা ধরে রাখে।
✅ নন-ইনভার্টার এসি: এতে কম্প্রেসার নির্দিষ্ট গতিতে চলে এবং তাপমাত্রা ঠিক থাকলে কম্প্রেসার বন্ধ হয়ে যায়, পরে আবার চালু হয় ফলে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়।
ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার এসির মূল পার্থক্য
এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে , তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো পেমেন্ট অপশন ঠিক করে রাখা। এসি কেনার সময় আপনার বাজেট ও সুবিধাজনক অর্থপ্রদানের পদ্ধতি নির্ধারণ করলে কেনাকাটা সহজ হয় এবং ভবিষ্যতে আর্থিক চাপ কমে।
পেমেন্ট অপশন ঠিক করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
✅ সঠিক বাজেট নির্ধারণ করা সহজ হয়।
✅ বিভিন্ন অফার ও ডিসকাউন্ট সম্পর্কে জানা যায়।
✅ ইএমআই (EMI) সুবিধা থাকলে মাসিক কিস্তিতে কেনার সুযোগ মেলে।
✅ ক্যাশব্যাক ও ব্যাংক অফার উপভোগ করা যায়।
✅ ফিন্যান্সিং বা ক্রেডিট লোনের প্রয়োজন হলে আগেভাগে পরিকল্পনা করা যায়।
বিভিন্ন পেমেন্ট অপশন ও সুবিধা
১. ক্যাশ পেমেন্ট (নগদ টাকা)
- সরাসরি মূল্য পরিশোধ করা হয়, ফলে কোনো অতিরিক্ত সুদ বা চার্জ লাগে না।
- বেশিরভাগ সময় নগদ পেমেন্টে ছাড় বা ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়।
- যদি বাজেট প্রস্তুত থাকে, তাহলে নগদ কেনাকাটা সবচেয়ে সাশ্রয়ী পদ্ধতি।
২. ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড পেমেন্ট
- ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে এককালীন বা কিস্তিতে (EMI) পেমেন্ট করা যায়।
- অনেক ব্যাংক ক্যাশব্যাক অফার ও ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে।
- ডেবিট কার্ড ব্যবহার করলে সরাসরি ব্যাংক ব্যালেন্স থেকে টাকা কাটা হয়।
৩. ইএমআই (EMI) সুবিধা
- EMI (Easy Monthly Installments) মানে আপনি মাসিক কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারেন।
- বেশিরভাগ ব্যাংক ও বিক্রেতারা ৩-১২ মাসের EMI অপশন দিয়ে থাকে।
- কিছু ব্যাংক 0% ইন্টারেস্ট EMI অফার করে, যা সাশ্রয়ী।
৪. মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) পেমেন্ট
- বিকাশ, নগদ, রকেটের মাধ্যমে সহজেই এসির মূল্য পরিশোধ করা যায়।
- অনেক সময় MFS পেমেন্টে ক্যাশব্যাক বা ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।
- নগদ টাকা সঙ্গে রাখার ঝামেলা ছাড়াই অনলাইনে পেমেন্ট করা সম্ভব।
৫. ব্যাংক লোন বা কনজ্যুমার ফিন্যান্সিং
- কিছু ব্যাংক ও এনবিএফআই (Non-Banking Financial Institutions) এসি কেনার জন্য কনজ্যুমার লোন দিয়ে থাকে।
- সুদ ও শর্তাবলী দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
৬. ট্রেড-ইন অফার (পুরনো এসি বদলে নতুন এসি)
- কিছু কোম্পানি পুরনো এসি জমা দিয়ে নতুন এসির মূল্যছাড় দেয়।
- এটি ব্যয় কমাতে সহায়ক হতে পারে।
৫. সঠিক টন ক্ষমতার এসি কিভাবে নির্বাচন করবেন
এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তার মধ্যে সঠিক টন ক্ষমতার এসি নির্বাচন করা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রুমের আকার, সূর্যের আলো, ব্যবহৃত ডিভাইস ও ইনসুলেশনের কথা বিবেচনা করে সঠিক টনের এসি বেছে নেওয়া উচিত। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়, এসির পারফরম্যান্স ভালো থাকে এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
আপনার রুমের মাপ অনুসারে নিচের তালিকা থেকে সঠিক এসি নির্বাচন করতে পারেন,
টন ক্ষমতা নির্ধারণের সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে,
🔹 রুমে মানুষের সংখ্যা: যদি রুমে বেশি মানুষ থাকে, তাহলে অতিরিক্ত তাপ তৈরি হয়, ফলে বেশি ক্ষমতার এসি প্রয়োজন হতে পারে।
🔹 ঘরের উচ্চতা: সাধারণত ১০ ফুট উচ্চতার কক্ষের জন্য উল্লিখিত তালিকা অনুসারে এসির টন নির্ধারণ করা যায়। যদি ঘরের উচ্চতা বেশি হয়, তাহলে একটু বেশি টনের এসি দরকার হতে পারে।
🔹 রুমে সূর্যের আলো প্রবেশ: যদি ঘরে সরাসরি সূর্যের আলো প্রবেশ করে, তাহলে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তাই এসির ক্ষমতা ০.৫ টন বেশি নেওয়া ভালো।
🔹 অন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি: রুমে যদি ফ্রিজ, কম্পিউটার বা অন্যান্য তাপ উৎপন্নকারী ডিভাইস থাকে, তবে এসির ক্ষমতা বেশি হতে হবে।
🔹 ইনসুলেশন ব্যবস্থা: ভালো ইনসুলেশন (যেমন ডাবল গ্লাস জানালা) থাকলে এসির অতিরিক্ত ক্ষমতা লাগবে না।
🔹 ঘরের উচ্চতা: সাধারণত ১০ ফুট উচ্চতার কক্ষের জন্য উল্লিখিত তালিকা অনুসারে এসির টন নির্ধারণ করা যায়। যদি ঘরের উচ্চতা বেশি হয়, তাহলে একটু বেশি টনের এসি দরকার হতে পারে।
🔹 রুমে সূর্যের আলো প্রবেশ: যদি ঘরে সরাসরি সূর্যের আলো প্রবেশ করে, তাহলে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তাই এসির ক্ষমতা ০.৫ টন বেশি নেওয়া ভালো।
🔹 অন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি: রুমে যদি ফ্রিজ, কম্পিউটার বা অন্যান্য তাপ উৎপন্নকারী ডিভাইস থাকে, তবে এসির ক্ষমতা বেশি হতে হবে।
🔹 ইনসুলেশন ব্যবস্থা: ভালো ইনসুলেশন (যেমন ডাবল গ্লাস জানালা) থাকলে এসির অতিরিক্ত ক্ষমতা লাগবে না।
৬. অনলাইনে দাম যাচাই করে নিন
এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তার মধ্যে সঠিক দামে এসি কেনা নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। অনেক সময় সরাসরি দোকান থেকে কেনাকাটা করলে দাম বেশি পড়ে যেতে পারে কিংবা একই মডেলের এসি ভিন্ন দোকানে ভিন্ন দামে বিক্রি হয় তাই, অনলাইনে দাম যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা আপনাকে বাজেটের মধ্যে সেরা ডিল খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
কেন অনলাইনে এসির দাম যাচাই করা দরকার?
🔹 মূল্য তুলনা করা যায়: বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসির মূল্য অনলাইনে সহজেই তুলনা করা সম্ভব, যা আপনাকে বাজেটের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
🔹 অতিরিক্ত খরচ এড়ানো যায়: অনেক দোকান অতিরিক্ত দাম নিতে পারে, তবে অনলাইনে দাম যাচাই করে সঠিক বাজার মূল্য জানা থাকলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
🔹 ডিসকাউন্ট ও অফার সম্পর্কে জানা যায়: অনেক ই-কমার্স সাইট ও ব্র্যান্ড অনলাইনে বিশেষ ছাড়, ক্যাশব্যাক, কিংবা কিস্তি সুবিধা দিয়ে থাকে, যা অফলাইনে পাওয়া যায় না।
🔹 কোন ব্র্যান্ডের এসি ভালো তা জানা যায়: বিভিন্ন অনলাইন রিভিউ ও কাস্টমার ফিডব্যাক দেখে বুঝতে পারবেন, কোন ব্র্যান্ডের এসি দীর্ঘমেয়াদে ভালো পারফরম্যান্স দেয়।
কোথায় কোথায় এসির দাম যাচাই করবেন?
✅ ব্র্যান্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: যেমন Walton, Singer, Gree, LG, Samsung ইত্যাদির ওয়েবসাইটে দাম দেখে নিতে পারেন।
✅ অনলাইন মার্কেটপ্লেস: Daraz, Pickaboo, AjkerDeal, Ryans Computers ইত্যাদির ওয়েবসাইটে একই মডেলের এসির দামে পার্থক্য রয়েছে কিনা তা দেখে নিন।
✅ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স শো-রুমের ওয়েবসাইট: Best Electronics, Transcom Digital, Rangs eMart-এর মতো প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রাইস কম্পেয়ার করা যেতে পারে।
✅ সোশ্যাল মিডিয়া ও ফোরাম: ফেসবুক মার্কেটপ্লেস বা বিভিন্ন গ্রুপে ইউজারদের রিভিউ ও দামের আপডেট পাওয়া যায়।
দাম যাচাই করার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
✔ প্রোডাক্ট স্পেসিফিকেশন মিলিয়ে নিন: দাম কম বলে কিনে ফেলা উচিত নয়, কারণ অনেক সময় ফিচার ও ওয়ারেন্টিতে পার্থক্য থাকতে পারে।
✔ কোনো লুকানো চার্জ আছে কিনা: অনেকে শোরুমে গিয়ে দেখে যে অনলাইন দামের চেয়ে বেশি পড়ছে, কারণ ইনস্টলেশন চার্জ, ডেলিভারি ফি ইত্যাদি সংযুক্ত করা হয়।
✔ গ্যারান্টি ও ওয়ারেন্টি সুবিধা: অনলাইনে কিনলে ওয়ারেন্টি সুবিধা পাচ্ছেন কিনা, তা নিশ্চিত করুন।
✔ অফার ও কিস্তি সুবিধা: কিছু অনলাইন স্টোরে ০% ইন্টারেস্টে কিস্তি সুবিধা পাওয়া যায়, যা আপনার বাজেটের মধ্যে ভালো এসি কেনার সুযোগ তৈরি করতে পারে।
৭. বিল কমাতে কোন এসি মডেল ভালো হবে
এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তার মধ্যে বিদ্যুৎ বিল কমাতে ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি মডেল বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রযুক্তির এসিগুলো কম্প্রেসরের গতি নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে, ফলে মাসিক বিদ্যুৎ বিল কমে আসে।
- এছাড়াও, এসির এনার্জি স্টার রেটিং দেখতে হবে। উচ্চতর স্টার রেটিংযুক্ত এসি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে খরচ কমায়।
- স্প্লিট এসি মডেলগুলি সাধারণত উইন্ডো এসির তুলনায় কম বিদ্যুৎ খরচ করে। তবে, এসির ধরন ও মডেল নির্বাচন করার সময় ঘরের আকার ও ব্যবহার বিবেচনা করা উচিত।
- সঠিক টনের এসি নির্বাচনও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ভূমিকা রাখে। ঘরের আকার অনুযায়ী টন নির্ধারণ করলে এসি কার্যকরভাবে কাজ করে এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হয় না।
- ফিল্টারের মানও বিবেচনা করা উচিত, কারণ উন্নত মানের ফিল্টারযুক্ত এসি বাতাস পরিষ্কার করে এবং এসির কার্যক্ষমতা বাড়ায় যা বিদ্যুৎ খরচ কমায়।
- সার্ভিসিং সুবিধা এবং ব্র্যান্ডের সুনামও বিবেচনা করা উচিত যাতে ভবিষ্যতে রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হয়।
- পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করে এমন এসি মডেল বেছে নেওয়া উচিত যা পরিবেশের জন্য ভালো এবং কার্যক্ষমতাও উন্নত।
- সঠিক ইনস্টলেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ এসির কার্যক্ষমতা ও বিদ্যুৎ খরচে প্রভাব ফেলে, তাই এ বিষয়গুলোতেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে এসি নির্বাচন করলে বিদ্যুৎ বিল কমানো সম্ভব হবে।
৮. এসির মূল্য এবং বাজারদর বিশ্লেষণ করুন
এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তার মধ্যে এসির দাম এবং বাজার মূল্য তুলনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসির দাম বিভিন্ন ব্র্যান্ড, ফিচার, ক্যাপাসিটি এবং বিক্রেতার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। সঠিক দামে ভালো মানের এসি কেনার জন্য বাজারদর যাচাই করা জরুরি।
কেন এসির দাম ও বাজার মূল্য তুলনা করা দরকার?
🔹 অতিরিক্ত খরচ এড়ানো: অনেক দোকান বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম একই মডেলের এসি ভিন্ন দামে বিক্রি করতে পারে। তাই দাম যাচাই না করলে বেশি টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে।
🔹 সঠিক বাজেট নির্ধারণ: বাজারদর সম্পর্কে ধারণা থাকলে আপনি আপনার বাজেট ঠিকভাবে সেট করতে পারবেন এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়াতে পারবেন।
🔹 সেরা অফার ও ডিসকাউন্ট পাওয়ার সুযোগ: বিভিন্ন শোরুম ও ই-কমার্স সাইটে বিশেষ ছাড় বা কিস্তির সুবিধা থাকে, যা তুলনা না করলে মিস হয়ে যেতে পারে।
🔹 গুণগত মান যাচাই: অনেক সময় কম দামে নিম্নমানের এসি পাওয়া যায়। দাম যাচাই করার পাশাপাশি গুণগত মান বিবেচনা করাও জরুরি।
কোথায় কোথায় এসির দাম ও বাজার মূল্য তুলনা করবেন?
✅ব্র্যান্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: Walton, Singer, Gree, LG, Samsung ইত্যাদি ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইটে দাম দেখে নিন।
✅ অনলাইন মার্কেটপ্লেস: Daraz, Pickaboo, AjkerDeal, Ryans Computers ইত্যাদিতে একই মডেলের এসির দাম কেমন তা চেক করুন।
✅ইলেকট্রনিক্স শোরুম: Best Electronics, Transcom Digital, Rangs eMart-এর মতো প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট বা সরাসরি শোরুমে গিয়ে মূল্য যাচাই করুন।
✅ফেসবুক মার্কেটপ্লেস ও গ্রুপ: বিভিন্ন অনলাইন ফোরাম ও ফেসবুক গ্রুপে ব্যবহারকারীদের মতামত ও বাজারদরের আপডেট পাওয়া যায়।
দাম তুলনার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন
✔ স্পেসিফিকেশন মিলিয়ে দেখুন: একই ব্র্যান্ডের এসির ভিন্ন ভিন্ন মডেল হতে পারে। তাই দাম কম দেখে না কিনে ফিচার ভালোভাবে মিলিয়ে দেখুন।
✔ কোনো লুকানো চার্জ আছে কিনা: কিছু শোরুম ও অনলাইন স্টোর ইনস্টলেশন ফি, ডেলিভারি চার্জ, বা অন্যান্য সার্ভিস চার্জ যোগ করে, যা দাম তুলনার সময় বিবেচনা করতে হবে।
✔ গ্যারান্টি ও ওয়ারেন্টি সুবিধা: এসির দাম কম হলে নিশ্চিত করুন যে ওয়ারেন্টি সুবিধা পাচ্ছেন কিনা, কারণ ওয়ারেন্টির মেয়াদ কম হলে ভবিষ্যতে খরচ বেশি হতে পারে।
✔ অফার ও কিস্তি সুবিধা: অনেক সময় ইলেকট্রনিক্স শোরুম বা অনলাইন স্টোরে ০% ইন্টারেস্টে কিস্তি সুবিধা পাওয়া যায়, যা তুলনা করার সময় বিবেচনায় রাখা দরকার।
৯. ঘরের মেঝেও খুব গুরুত্বপূর্ণ
এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তার মধ্যে ঘরের মেঝের গঠন ও উপাদান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকেই এসি কেনার সময় রুমের দেয়াল, জানালা, ছাদ বা পর্দার দিকে মনোযোগ দেন কিন্তু ঘরের মেঝেও এসির কার্যকারিতা ও ঠান্ডা রাখার ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে।
কেন ঘরের মেঝে গুরুত্বপূর্ণ?
- ✅তাপ ধরে রাখার ক্ষমতা: আপনার ঘরের মেঝে যদি মার্বেল, গ্রানাইট বা টাইলসের হয়, তাহলে এটি ঠান্ডা থাকার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে, কাঠ বা কার্পেটযুক্ত মেঝে তাপ ধরে রাখে যা এসির কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
- ✅ ঠান্ডা বাতাসের সংরক্ষণ: এসি সাধারণত উঁচুতে স্থাপন করা হয় এবং ঠান্ডা বাতাস নিচের দিকে নামে। যদি মেঝে গরম হয়, তবে এটি ঠান্ডা বাতাস দ্রুত শোষণ করতে পারে এবং ঘর সহজে ঠান্ডা হতে সময় নেয়।
- ✅ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ খরচ: গরম মেঝে থাকলে এসির ওপর বেশি চাপ পড়ে, ফলে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যেতে পারে। সঠিকভাবে তাপ সংরক্ষণ করতে পারলে বিদ্যুৎ বিলও কম হবে।
- ✅ স্বাস্থ্য ও আরামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ: ঠান্ডা ঘরে গরম মেঝে থাকলে আরামদায়ক অনুভূতি নষ্ট হতে পারে। বিশেষ করে শিশু বা বয়স্করা যদি মেঝেতে বসেন, তাহলে তাদের আরামের জন্য এটি বড় ভূমিকা রাখে।
কিভাবে ঘরের মেঝের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবেন?
✔ ঠান্ডা উপাদানের মেঝে ব্যবহার করুন: যদি নতুন ফ্ল্যাট বা বাড়ি তৈরি করেন তবে মার্বেল, গ্রানাইট বা টাইলসের মেঝে রাখার চেষ্টা করুন যা সহজে ঠান্ডা থাকে।
✔ কার্পেট কম ব্যবহার করুন: গরম আবহাওয়ায় কার্পেট মেঝের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই গ্রীষ্মকালে কার্পেট বা মোটা ম্যাট কম ব্যবহার করা ভালো।
✔ পর্যাপ্ত শেডিং নিশ্চিত করুন: যদি আপনার ঘরে সরাসরি সূর্যের আলো মেঝেতে পড়ে, তবে জানালায় পর্দা বা ব্লাইন্ড ব্যবহার করুন, যা ঘরের অভ্যন্তরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
✔ রাতে জানালা খুলে রাখুন: যদি সম্ভব হয়, তাহলে রাতে ঘরের জানালা খুলে রাখুন যাতে প্রাকৃতিক ঠান্ডা বাতাস মেঝেতে প্রভাব ফেলে।
✔ সঠিক এসি সেটিংস ব্যবহার করুন: আপনার এসির টেম্পারেচার ২৪-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সেট করুন, যাতে ঘরের মেঝে খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা না হয়।
১০. এনার্জি এফিশিয়েন্সি ও স্টার রেটিং যাচাই করা
এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তার মধ্যে এনার্জি এফিশিয়েন্সি ও স্টার রেটিং একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকেই এসির মূল্য ও ব্র্যান্ড দেখে কেনার সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু এর এনার্জি কনজাম্পশন বা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সক্ষমতা যাচাই করা জরুরি। কেননা, একটি ভালো এনার্জি রেটিংযুক্ত এসি দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ বিল কমাতে সাহায্য করে।
স্টার রেটিং কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
✅ স্টার রেটিং কী?
স্টার রেটিং হলো একটি বিশেষ এনার্জি এফিশিয়েন্সি লেবেল, যা দেখায় যে এসিটি কতটা বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী। সাধারণত, ১-৫ স্টারের মধ্যে রেটিং দেওয়া হয়। বেশি স্টার মানে এসিটি কম বিদ্যুৎ খরচ করে বেশি কার্যকরভাবে ঠান্ডা করতে পারে।
✅ উচ্চ স্টার রেটিং মানে কি ভালো এসি?
হ্যাঁ! সাধারণত ৪ বা ৫ স্টার রেটিংযুক্ত এসিগুলো কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ বিল কম হয়। যদিও ৫ স্টার এসির দাম একটু বেশি হয়, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক।
✅ স্টার রেটিং কীভাবে হিসাব করা হয়?
স্টার রেটিং নির্ধারণ করা হয় ISEER (Indian Seasonal Energy Efficiency Ratio) স্কোরের ভিত্তিতে, যা এসির মোট কুলিং ক্ষমতা ও বিদ্যুৎ খরচের অনুপাত হিসাব করে।
কোন স্টার রেটিংয়ের এসি কেনা উচিত?
🔹 ১-২ স্টার এসি: কম দামের হলেও বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে, তাই বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে।
🔹 ৩ স্টার এসি: মাঝারি মানের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, স্বল্প বাজেটের মধ্যে ভালো অপশন।
🔹 ৪-৫ স্টার এসি: সবচেয়ে এনার্জি এফিশিয়েন্ট, দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ খরচ কম হয়।
যদি এসি দীর্ঘ সময় চালানোর প্রয়োজন হয়, তবে ৫ স্টার রেটিং যুক্ত এসি কেনাই ভালো।
এনার্জি এফিশিয়েন্সি যাচাইয়ের উপায়
✔ BEE লেবেল চেক করুন: BEE (Bureau of Energy Efficiency) অনুমোদিত স্টিকার থাকা এসি কিনুন, যা আসল এনার্জি রেটিং নিশ্চিত করে।
✔ ISEER স্কোর দেখুন: উচ্চ ISEER রেটিং মানে এসিটি বেশি কার্যকর এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
✔ ইনভার্টার প্রযুক্তি বেছে নিন: ইনভার্টার এসিগুলো সাধারণত বেশি এনার্জি এফিশিয়েন্ট হয় এবং কম বিদ্যুৎ খরচ করে।
✔ এনার্জি কনজাম্পশন ইউনিট (kWh) যাচাই করুন: স্টার রেটিং লেবেলে বছরে কত ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হবে, তা লেখা থাকে। কম kWh মানে কম বিদ্যুৎ বিল।
১১. স্প্লিট নাকি উইন্ডো এসি কিনবেন তা ঠিক করুন
এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর একটি হলো আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী স্প্লিট নাকি উইন্ডো এসি কিনবেন। এসির ধরন নির্ধারণ করা না হলে পরে সেটআপ বা ব্যবহার করতে গিয়ে অসুবিধা হতে পারে। তাই কেনার আগে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে বুঝে নেওয়া দরকার।
স্প্লিট এবং উইন্ডো এসির মধ্যে মূল পার্থক্য গুলো হলো,
কোন ধরনের এসি আপনার জন্য উপযুক্ত?
✅ স্প্লিট এসি কাদের জন্য ভালো?
✔ যদি ঘরের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য ঠিক রাখতে চান
✔ যদি কম শব্দযুক্ত এসি চান
✔ যদি বড় এবং উষ্ণ ঘরের জন্য শক্তিশালী কুলিং প্রয়োজন হয়
✔ যদি আপনার বাজেট একটু বেশি থাকে
✅ উইন্ডো এসি কাদের জন্য ভালো?
✔ যদি সহজ ইনস্টলেশন চান
✔ যদি স্বল্প বাজেটে ভালো এসি চান
✔ যদি ছোট বা মাঝারি আকারের রুম থাকে
✔ যদি জানালায় ইনস্টল করার সুবিধা থাকে
১২. ইনস্টলেশন ও বিক্রয়োত্তর সেবার মান যাচাই করা
এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইনস্টলেশন ও বিক্রয়োত্তর সেবার মান যাচাই করা। কেননা, একটি এসি কেনার পর সেটি সঠিকভাবে ইনস্টল করা না হলে কাঙ্ক্ষিত শীতলতা পাওয়া কঠিন হতে পারে। একইসঙ্গে, এসি কেনার পর কোনো সমস্যা হলে ভালো বিক্রয়োত্তর সেবা না পেলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই ইনস্টলেশন এবং বিক্রয়োত্তর সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা খুবই জরুরি।
ইনস্টলেশন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
একটি এসির কার্যকারিতা অনেকটাই নির্ভর করে সেটি সঠিকভাবে ইনস্টল করা হয়েছে কি না। যদি ইনস্টলেশনে ভুল হয়, তাহলে এসির কুলিং ক্ষমতা কমে যেতে পারে, বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যেতে পারে এবং যেকোনো সময় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
ইনস্টলেশনের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে,
✅ এসির আউটডোর ইউনিট এমন জায়গায় স্থাপন করতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।
✅ ইনডোর ইউনিটের অবস্থান এমন হতে হবে যাতে রুমের সব জায়গায় ঠান্ডা বাতাস পৌঁছায়।
✅ এসির পাইপিং সঠিকভাবে সংযুক্ত ও ইনসুলেট করা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে।
✅ সার্কিট ব্রেকার এবং বৈদ্যুতিক কানেকশন ঠিকভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে কি না, তা চেক করা উচিত।
ভালো বিক্রয়োত্তর সেবা কেন প্রয়োজন?
একটি এসি দীর্ঘমেয়াদে ভালো পারফরম্যান্স দেবে কি না, তা নির্ভর করে কোম্পানির বিক্রয়োত্তর সেবার মানের ওপর। এসির যেকোনো সমস্যা হলে দ্রুত সমাধান পাওয়ার জন্য ভালো গ্রাহকসেবা অত্যন্ত জরুরি।
ভালো বিক্রয়োত্তর সেবা যাচাইয়ের উপায়,
✔ ওয়ারেন্টি নীতিমালা চেক করুন – এসির কম্প্রেসর ও অন্যান্য অংশের জন্য কোম্পানি কত বছরের ওয়ারেন্টি দিচ্ছে তা যাচাই করুন।
✔ সার্ভিস সেন্টারের অবস্থান দেখুন – কাছাকাছি সার্ভিস সেন্টার আছে কি না, তা দেখে নিন, যাতে কোনো সমস্যা হলে দ্রুত সহায়তা পাওয়া যায়।
✔ অনলাইন রিভিউ পড়ুন – গ্রাহকরা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিক্রয়োত্তর সেবা সম্পর্কে কী বলছেন, তা অনলাইনে দেখে নিতে পারেন।
✔ বিনামূল্যে ইনস্টলেশন সুবিধা আছে কি না চেক করুন – কিছু কোম্পানি ফ্রি ইনস্টলেশন অফার করে, যা আপনাকে বাড়তি খরচ থেকে বাঁচাতে পারে।
১৩. কুলিং গ্যাসের ধরন (R32, R410A) যাচাই করা
এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তার মধ্যে কুলিং গ্যাসের ধরন (যেমন: R32, R410A) যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুলিং গ্যাস এসির কার্যক্ষমতা, পরিবেশগত প্রভাব এবং বিদ্যুৎ খরচে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
R32 গ্যাস:
- পরিবেশবান্ধব: R32 গ্যাসের গ্লোবাল ওয়ার্মিং পটেনশিয়াল (GWP) R410A-এর তুলনায় প্রায় তিনগুণ কম, যা পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর।
- উচ্চ কার্যক্ষমতা: এই গ্যাস তাপ স্থানান্তরে অধিক কার্যকর, ফলে এসির কুলিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বিদ্যুৎ খরচ কম হয়।
R410A গ্যাস:
- ব্যাপক ব্যবহার: R410A গ্যাস পূর্বে প্রচলিত ছিল এবং এখনও অনেক এসিতে ব্যবহৃত হয়।
- পরিবেশগত প্রভাব: R410A-এর GWP তুলনামূলকভাবে বেশি, যা পরিবেশের জন্য কম সুবিধাজনক।
পরিবেশ সুরক্ষা এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য R32 গ্যাসযুক্ত এসি বেছে নেওয়া উত্তম। তবে, বাজারে উপলব্ধতা এবং বাজেট বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সর্বোপরি, এসি কেনার সময় কুলিং গ্যাসের ধরন যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৪. নয়েজ লেভেল ও অপারেশন সাউন্ড পরীক্ষা করা
এসি কেনার আগে যে ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তার মধ্যে নয়েজ লেভেল ও অপারেশন সাউন্ড পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নয়েজ লেভেল বা শব্দমাত্রা এসির ব্যবহারিক আরামের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে যদি এটি শয়নকক্ষ বা অফিসের মতো স্থানে ব্যবহৃত হয়।
কেন নয়েজ লেভেল গুরুত্বপূর্ণ
- আরামদায়ক পরিবেশ: উচ্চ শব্দমাত্রা ঘুম বা কাজের সময় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। তাই, কম নয়েজ লেভেলযুক্ত এসি বেছে নেওয়া উচিত।
- স্বাস্থ্যকর পরিবেশ: অতিরিক্ত শব্দমাত্রা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপ বা অন্যান্য স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণ হতে পারে।
কীভাবে নয়েজ লেভেল যাচাই করবেন
- ডেসিবেল (dB) রেটিং পরীক্ষা: এসি কেনার সময় এর ডেসিবেল রেটিং পরীক্ষা করুন। সাধারণত, ১৯-২৫ ডেসিবেল রেটিংযুক্ত এসি মডেলগুলি নীরব বা কম শব্দযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।
- ব্যবহারকারীর পর্যালোচনা পড়ুন: অনলাইন রিভিউ বা ব্যবহারকারীর মতামত পড়ে এসির শব্দমাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
- স্টোরে পরীক্ষা করুন: সম্ভব হলে, স্টোরে এসি চালিয়ে এর শব্দমাত্রা সরাসরি পরীক্ষা করুন।
উদাহরণস্বরূপ
কিছু এসি মডেল বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শব্দমাত্রা কমিয়ে আনে। এগুলি সাধারণত ইনভার্টার প্রযুক্তি এবং উন্নত ফ্যান ডিজাইন ব্যবহার করে, যা শব্দ উৎপাদন কমায়।
এসি কেনার সময় নয়েজ লেভেল ও অপারেশন সাউন্ড পরীক্ষা করা অপরিহার্য। এটি নিশ্চিত করে যে আপনি একটি আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে এসি ব্যবহার করতে পারবেন।
১৫. স্মার্ট ফিচার যেমন WiFi, অটো-ক্লিন ফাংশন দেখা
এসি কেনার আগে যে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তার মধ্যে স্মার্ট ফিচার যেমন WiFi এবং অটো-ক্লিন ফাংশন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ফিচারগুলি এসির ব্যবহারকে সহজতর ও কার্যকর করে তোলে।
WiFi ফিচার
- দূরবর্তী নিয়ন্ত্রণ: WiFi সমর্থিত এসি স্মার্টফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, ফলে আপনি ঘরের বাইরে থেকেও এসি চালু বা বন্ধ করতে পারেন।
- শিডিউল সেটিং: WiFi ফিচারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে এসি চালু বা বন্ধ করার শিডিউল সেট করা সম্ভব, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সহায়তা করে।
অটো-ক্লিন ফাংশন
- স্বয়ংক্রিয় পরিষ্কার: অটো-ক্লিন ফাংশনযুক্ত এসি নিজে থেকেই ফিল্টার ও অভ্যন্তরীণ অংশগুলি পরিষ্কার করে, যা ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস প্রতিরোধ করে এবং বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে।
- রক্ষণাবেক্ষণ সহজতর: এই ফিচারটি রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কমায়, ফলে এসির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
স্মার্ট ফিচারযুক্ত এসি বেছে নেওয়ার সময় এই বিষয়গুলি বিবেচনা করা উচিত, যাতে আপনি আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য
সংক্ষেপে, এসি কেনার আগে উপরোক্ত গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি বিষয় খেয়াল রাখা আপনাকে সঠিক পছন্দ করতে সাহায্য করবে যা দীর্ঘমেয়াদে আরামদায়ক অভিজ্ঞতা ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় নিশ্চিত করবে। সঠিক মডেল, শক্তি দক্ষতা, শব্দমাত্রা, কুলিং গ্যাস ও স্মার্ট ফিচার যাচাই করা অপরিহার্য, যাতে আপনার বিনিয়োগ সঠিকভাবে কাজে লাগে। তাই, নিজের চাহিদা অনুযায়ী গবেষণা করে ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এসি কেনাই হবে বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url